পর্যটনে নগদ সহায়তা, সিআইপি ঘোষণা ও রপ্তানি ট্রফি প্রবর্তনের আশ্বাস
Tweet
চারদিকে করোনার থাবায় ক্ষতিগ্রস্ত সকল ব্যবসা প্রতিষ্ঠান । পর্যটন শিল্পও তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য একটি অংশ। অথচ দেশে এই খাত থেকে বছরে কোটি কোটি টাকা আয় হয় । এসব সেক্টরে কাজ করেন দেশের হাজার হাজার মানুষ। আজ তাদেরও সংকটকাল। বন্ধ রয়েছে পর্যটনের সকল হোটেল মোটেল রিসর্ট ও এর সাথে সাশ্লিষ্ট নানা ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। তবে দীর্ঘ আলোচনার পর সরকার অবশেষে এই খাতে দৃষ্টি দিবে বলে আশ্বাস দিয়েছে। গতকাল ২৭ মে ২০২০ খ্রি: বুধবার সম্মিলিত পর্যটন জোটের সাথে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ৭ম অনলাইন মিটিং অনুষ্ঠিত হয়। ‘পর্যটন রপ্তানিতে সহায়তা প্রদান’ শীর্ষক মিটিংয়ে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা জাবেদ আহমেদ এবং বিশেষ অতিথি ছিলেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব এ এইচ এম শফিকুজ্জামান। জোটের স্কলার্স উইং থেকে অংশগ্রহণ করেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্নতত্ব বিভাগের প্রফেরস ড. সুফি মোস্তাফিজুর রহমান, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্যুরিজম এন্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট বিভাগের চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. মো. এনায়েত হোসেন, ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টস্ বাংলাদেশ (ইউল্যাব)-এর প্রফেসর ড. শাহনাজ হুসনে জাহান, ইসলামী ইউনিভার্সিটি, কুষ্টিয়া, এর ট্যুরিজম এন্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট বিভাগের চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. মো. মাহবুবুল আরফিন, সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের মৃত্তিকা বিজ্ঞান বিভাগের প্রফেসর ড. মো. আবুল কাশেম, কমিউনিটিভিত্তিক পর্যটন বিশেষজ্ঞ শহীদ হোসেন শামীম এবং জোট নেতা জয়িতা শেখ ও শহীদুল ইসলাম সাগর। মিটিং পরিচালনা করেন সম্মিলিত পর্যটন জোটের আহবায়ক ও বাংলাদেশ ট্যুরিজম ফাউন্ডেশনের সভাপতি মোখলেছুর রহমান।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে এ এইচ এম শফিকুজ্জামান বলেন, বর্তমান বিশ্বে পর্যটন একটি আলোকিত খাত। এই মিটিংয়ের মাধ্যমে পর্যটনের সাথে কাজ করার সুযোগ সৃষ্টি করার জন্য তিনি সম্মিলিত পর্যটন জোটকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন। তিনি বলেন, বিজনেস প্রমোশন কাউন্সিল (বিপিসি) রপ্তানিমুখী নতুন খাত খুঁজছে। তাই প্রস্তাব ও কোর্স কারিকুলাম পেলে আমরা পর্যটনকে নতুন খাত হিসেবে যুক্ত করে এর উদ্যোক্তাদের প্রশিক্ষণে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। তিনি উপস্থাপকের বিভিন্ন প্রস্তাবনার জবাব দিতে গিয়ে বলেন যে, বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার সাথে চুক্তি মোতাবেক মোড-৪ অনুযায়ী পর্যটন ও টেলিকমিউনিকেশনকে বিদেশি বিনিয়োগের জন্য উন্মুক্ত করা হয়েছে। তিনি আরো বলেন, আপনাদের এবং ট্যুরিজম বোর্ডের কাছ থেকে সুনির্দিষ্ট প্রস্তাবনা পেলে পর্যটনের বিকাশ, সম্ভাবনা ও অবদানের জন্য এইখাতে অবশ্যই সিআইপি নির্ধারণ ও রপ্তানি ট্রফি প্রবর্তন করা হবে। বিশেষ অতিথি আরো বলেন, পর্যটনের যে কোন উপখাতে যন্ত্র বা যন্ত্রাংশ, ইক্যুইপমেন্ট, ক্রীড়া বা বিনোদন উপকরণ ও যানবাহন ইত্যাদি আমদানিতে সর্বনিম্ন আমদানি কর এবং অপ্রচলিত রপ্তানি খাত হিসেবে একে নগদ উৎসাহ প্রদানের জন্য জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সাথে তারা দরকষাকষি করবেন। তিনি আরো বলেন যে, পর্যটন খাতকে আমরা পলিসি সাপোর্ট দিতে চাই যাতে এই খাত পেশাগতভাবে বেড়ে উঠতে পারে।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে জাবেদ আহমেদ বলেন, বাংলাদেশেন পর্যটন এত বড় হয়েছে যে, কেবল মালয়েশিয়াতে বাংলাদেশ থেকে বছরে ১৬-১৭ লক্ষ পর্যটক যাচ্ছেন। প্রতি ঈদের স্থানীয়ভাবে অন্তত ১ হাজার ৫ শ কোটি টাকার পর্যটন ব্যবসায় হয়। তিনি করোনা-উত্তরকালে আঞ্চলিক পর্যটনের উপর বিশেষ জোর দেওয়ার জন্য সকলের প্রতি আহবান জানান। তিনি জোর দিয়ে বলেন যে, পর্যটনখাতে নগদ উৎসাহ, সিআইপি ঘোষণা ও রপ্তানি ট্রফি প্রবর্তনের যথার্থ দাবীদার। এই খাতকে উজ্জীবিত করার লক্ষ্যে এইসব স্বীকৃতি ও মর্যাদা দেওয়া অবশ্যই উচিত। এতে করে খাতটির প্রবৃদ্ধি আরো বহুগুণে বাড়বে। অন্যদিকে পর্যটনের বিভিন্ন বাণিজ্য সংগঠনগুলির অবস্থান আরো সুদৃঢ় করার প্রতি গুরুত্ব আরোপ করেন। তিনি বলেন, পেশাগত দক্ষতা ও বাণিজ্যিক নৈতিকতা দিয়ে পর্যটনকে গড়ে তুলতে হবে।
স্কলারগণ করোনা পরবর্তী সময়ে পর্যটনকে গড়ে তোলার জন্য ছোট ও প্রান্তিক স্টেকহোল্ডারদের প্রশিক্ষণ, গ্রামীণ পর্যটনের উন্নয়ন, বিদেশে বাংলাদেশের দূতাবাসসমূহে পর্যটন প্রমোশন কেন্দ্র স্থাপন, বাণিজ্য কুটনীতিতে পর্যটনকে অগ্রাধিকার প্রদান, স্যুভেনির হিসেবে প্রত্নসম্পদের রেপ্লিকা তৈরি, মোড়কীকরণে প্রমিতকরণ, আর্ট, ক্রাফট ও আয়ুর্বেদিক মেডিসিনের উন্নয়নে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে মনযোগী হওয়ার জন্য পরামর্শ দেন। তারা পর্যটন মহাপরিকল্পনা প্রণয়নে স্টেকহোল্ডার ও দেশীয় বিশেষজ্ঞদের অংশগ্রহণের আবশ্যকীয়তা উল্লেখ করেন।