আভ্যন্তরীণ ফ্লাইট চালুর প্রথম দিন যাত্রীর চাপ কম
Tweet
করোনা ভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে দুই মাসের বেশি সময় বন্ধ থাকার পর আভ্যন্তরীণ রুটে যাত্রীবাহী ফ্লাইট চলাচল শুরু হলেও প্রথম দিন যাত্রীর চাপ তেমন নেই। ফলে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক) আসনসংখ্যার সর্বোচ্চ ৭৫ শতাংশ যাত্রী বহনের অনুমতি দিলেও সোমবার বেশিরভাগ ফ্লাইট চলছে তারচেয়ে কম যাত্রী নিয়ে। ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের পরিচালক এএইচএম তৌহিদ উল আহসান বলছেন, বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) বেঁধে দেওয়া স্বাস্থ্য সুরক্ষার নিয়ম মেনেই যাত্রী পরিবহন করছে এয়ারলাইন্সগুলো।একই কথা বলেছেন চট্টগ্রামের শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ম্যানেজার উইং কমান্ডার সারোয়ার ই জাহান।
করোনাভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে ২৬ মার্চ থেকে চলা লকডাউন ওঠার হওয়ার পর রোববার থেকে অফিস খোলার পাশাপাশি যানবাহন চলাচালের অনুমতি দেয় সরকার। সেদিনই বেবিচক জানায়, আভ্যন্তরীণ তিনটি রুটে ১ জুন থেকে ফ্লাইট চলবে, তবে আন্তর্জাতিক রুটে যাত্রী পরিবহনের (শিডিউল পেসেঞ্জার ফ্লাইট) ক্ষেত্রে বিধিনিষেধ ১৫ জুন পর্যন্ত বহাল থাকবে।
বেবিচক বলেছে, ফ্লাইট পরিচালনার ক্ষেত্রে সব এয়ারলাইন্স ও যাত্রীদের শারীরিক দূরত্ব ও পরিচ্ছন্নতার বিধি মেনে চলতে হবে। এয়ারক্রাফটের ধারণক্ষমতার ৭৫ শতাংশের বেশি যাত্রী নেওয়া যাবে না। যাত্রীদের বসার ক্ষেত্রে দূরত্ব নিশ্চিত করতে হবে। যাত্রীদের মাস্ক ও হ্যান্ড গ্লাভস দিতে হবে। আসা যাওয়ার আগে এয়ারক্রাফট ‘স্যানিটাইজ’ করতে হবে।
বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের জনসংযোগ শাখার উপ মহা ব্যবস্থাপক তাহেরা খন্দকার বলেন, ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম, সিলেট ও সৈয়দপুরে আসা যাওয়ার ৬টি ফ্লাইট চলার কথা ছিল সোমবার। কিন্তু যাত্রী সঙ্কটে চট্টগ্রাম ও সিলেটের চারটি ফ্লাইট বাতিল করতে হয়েছে। কেবল সৈয়দপুর রুটে দুটি ফ্লাইট চালাতে পেরেছে বিমান।
আভ্যন্তরীণ রুটে ৭৫ আসনের ড্যাশ -৮ উড়োজাহাজ দিয়ে যাত্রী পরিবহনের কথা জানিয়ে তাহেরা খন্দকার বলেন, ভাইরাসের বিস্তার এড়াতে বিমান আসন সংখ্যার অর্ধেক যাত্রী বহন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তবে সোমবার সকালে ঢাকা থেকে সৈয়দপুরগামী ফ্লাইটে যাত্রী ছিলেন কেবল ৪জন, ফেরার সময় ২০ জন বিমানের যাত্রী হয়েছিলেন। আজ মঙ্গলবার ঢাকা থেকে তিনটি আভ্যন্তরীণ গন্তব্যেই বিমানের ফ্লাইট পরিচলিত হবে জানিয়ে তাহেরা বলেন, ‘আশা করছি ধীরে ধীরে যাত্রী সংখ্যা বাড়বে।’ ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্স ৭২ আসনের এটিআর ৭২-৬০০ এবং ৭৬ আসনের ড্যাশ-৮ উড়োজাহাজ দিয়ে আভ্যন্তরীণ ফ্লাইট চালাচ্ছে। এ এয়ারলাইন্সের জনসংযোগ বিভাগের জিএম মো. কামরুল ইসলাম বলেন, প্রথমদিন সকাল ৭টায় ২৮ জন যাত্রী নিয়ে তাদের প্রথম ফ্লাইট ঢাকা থেকে চট্টগ্রামে গেছে। ফিরেছে ৩৫ জন যাত্রী নিয়ে। এছাড়া ৫১ জন যাত্রী নিয়ে সৈয়দপুরে গিয়ে ৫৪ জন যাত্রী নিয়ে ফেরেছে ইউএস বাংলার আরেকটি উড়োজাহাজ। গতকাল সোমবার সারাদিনে তাদের আসা যাওয়া মিলিয়ে চট্টগ্রাম রুটে ১২টি, সৈয়দপুর রুটে ৬টি এবং সিলেট রুটে ২টি ফ্লাইট রয়েছে বলে জানান কামরুল।
আরেক বেসরকারি বিমান পরিবহন সংস্থা নভোএয়ারের সিনিয়র ম্যানেজার (মার্কেটিং এন্ড সেলস) একেএম মাহফুজুল আলম বলেন, ৭২ আসনের এটিআর ৭২-৫০০ এয়ারক্রাফট দিয়ে সৈয়দপুর, সিলেট ও চট্টগ্রাম রুটে তারা ফ্লাইট পরিচালনা করছেন। তবে এখন প্রতি ফ্লাইটে ৫০ জনের বেশি যাত্রী নিচ্ছেন না। গতকাল সোমবার এই তিন গন্তেব্যে আসা যাওয়াসহ নভোএয়ারের মোট ১৪টি ফ্লাইট রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, সকালে ঢাকা থেকে সৈয়দপুর ফ্লাইটে ৪০ জন গেছেন, এসেছেন ৫০ জন। চট্টগ্রাম রুটে সকালে ২৯ জন যাত্রী গিয়েছেন, ঢাকা এসেছেন ২২ জন। প্রথম দিন যাত্রী কম হলেও আগামীতে ধীরে ধীরে যাত্রী সংখ্যা বাড়বে বলে আশা প্রকাশ করেন মাহফুজুল আলম।
শাহজালাল বিমানবন্দরের পরিচালক তৌহিদ উল আহসান বলেন, সোমবার সারাদিনে এ বিমানবন্দর থেকে ২৪টি ফ্লাইট ছাড়ার কথা। সবগুলো ফ্লাইটেই নিয়ম মেনে যাত্রী পরিবহন করা হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
চট্টগ্রামের শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ম্যানেজার সারোয়ার ই জাহান বলেন, সকালে ঢাকা থেকে আসা একটি উড়োজাহাজের অবতরণের মধ্য দিয়ে দুই মাস পর এ বিমানবন্দরের ‘অপারেশনাল কার্যক্রম’ শুরু হয়। দুপুর পর্যন্ত নভোএয়ার এবং ইউএস-বাংলার দুটি করে ফ্লাইট ঢাকা থেকে এসে আবার যাত্রী নিয়ে চট্টগ্রাম ছেড়ে গেছে বলে জানান তিনি। বিমানবন্দর এলাকায় সব ধরনের স্বাস্থ্যবিধি মেনে কাজ চলছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘যাত্রী প্রবেশের আগে পার্কিং এলাকায় জীবাণুনাশক ছিটানো হচ্ছে। বিমানবন্দরে এয়ারলাইন্স কর্তৃপক্ষ যাত্রীদের হ্যান্ড গ্লাভস ও মাস্ক সরবরাহ করছে। টেম্পারেচার পরীক্ষা করে তাদের ভেতরে প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে। ‘পরে শারীরিক দূরত্বের নিয়ম মেনে ওয়েটিং রুমে যাত্রীরা অপেক্ষা করছেন। সেখানে দূরত্ব মেনে বসার জন্য মার্কিং করে দেওয়া হয়েছে। উড়োজাহাজে ওঠার আগেও আরেকবার যাত্রীদের তাপমাত্রা পরীক্ষা করা হচ্ছে।’ সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার জন্য বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ নিয়মিত মাইকিং করছে বলেও জানান সারোয়ার ই জাহান।