এক সপ্তাহের মধ্যে দেশে পর্যটন খাতে এসওপি চূড়ান্তের ঘোষণা
Tweet
ভ্রমন ও অবকাশ শিল্প পুনরায় তাদের ব্যবসা চালু হওয়ার পর কিভাবে স্বাস্থবিধি ও সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখবে সে বিষয়ে বাংলাদেশ আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে জাতীয় পর্যায়ে একটি স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিউর(এসওপি) প্রণয়ন করতে যাচ্ছে সরকার ।
কোভিড-১৯ প্রাদুর্ভাবের কারণে সারা বিশ্বে ভ্রমন স্থবির হয়ে পড়েছে। পর্যটকদের আকৃষ্ট করতে প্রতিটি দেশেই পর্যটন সংক্রান্ত এসওপি বাধ্যতামূলক হিসেবে দেখা হয়। আগামী মাসের গোড়ার দিকে ভ্রমণ স্থগিতাদেশ তুলে নেয়ার পরিকল্পনা নেয়া হচ্ছে। ইউরোপের কয়েকটি দেশ চলতি মাসের মাঝামাঝি থেকেই পুনরায় পর্যটন মৌসুম চালু করতে যাচ্ছে।
বাংলাদেশ পর্যটন বোর্ড (বিটিবি) এবং জাতীয় পর্যটন সংস্থা (এনটিও) পুনরায় দেশের পর্যটন কেন্দ্রগুলো চালু করার পর এখানে পর্যটকদের স্বাস্থ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত রাখার লক্ষ্যে এসওপি প্রণয়ন করছে।করোনার কারণে লকডাউনে পর্যটন খাতটি সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
বিটিবি’র প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) এম জাবেদ আহমেদ মঙ্গলবার বাসস-কে বলেন, ‘আমরা এ বিষয়ে কাজ করছি। আমরা এ বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের মতামত নিচ্ছি। আমরা এক সপ্তাহের মধ্যে বেসামরিক বিমান ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের কাছে চূড়ান্ত খসড়া এসওপি পেশ করব।
পর্যটন মন্ত্রণালয় এইখসড়া এসওপিপাওয়ার পর এ ব্যাপারে মতামত জানার জন্য এটিকে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কাছে পাঠাবে।
আহমেদ বলেন, ‘স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এসওপি সংশোধন করতে পারে বা নাও করতে পারে। তাদের নির্দেশনা অনুযায়ী বাস্তবায়নের জন্য আমরা চূড়ান্ত এসওপি প্রকাশ করবো।’
বিটিবি বেসরকারি খাতের অংশগ্রহণে এসওপিপ্রণয়নের জন্য একটি কমিটি গঠন করেছে। এই কমিটি পর্যটকদের বাংলাদেশে অবস্থানকালে বিমানবন্দর, হোটেল, রেস্তোরাঁ, বিভিন্ন স্পটে নিয়ে যাওয়া ও অন্যান্য কর্মকা- কিভাবে পরিচালনা করবে তার কিছু প্রটোকল নির্ধারণ করে দেবে।
আহমেদ বলেন, বাংলাদেশের পর্যটন খাতের জন্য এসওপি প্রণয়ণ করতে তারা ইউনাইটেড নেশন ওয়ার্ল্ড ট্যুরিজম অরগানাইজেশন (ইউএনডব্লিউটিও) ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) দিকনির্দেশনা অনুসরণ করছেন।
পর্যটন খাতকে শক্তিশালী করতে সহায়তার জন্য সম্প্রতি ইউএনডব্লিউটিও কিছু নীতিমালা প্রণয়ন করেছে।
এদিকে চলতি বছরের ৩১ মার্চ ডব্লিউএইচও এই খাতের ব্যবস্থাপনায় কোভিড -১৯ সংক্রান্ত অন্তবর্তীকালীন দিকনির্দেশনা দিয়েছে।
বিটিবি প্রধান জানিয়েছেন, এসওপি খুবই সহজ ভাষায় লিখা হবে যাতে যে কেউ এটি মেনে চলতে পারে। এটির কঠোর বাস্তবায়ন তদারকির জন্য একটি কৌশল প্রণয়ন করা হবে।
এদিকে গত সোমবার প্যাসিফিক এশিয়া ট্রাভেল অ্যাসোসিয়েশন (পিএটিএ)-বাংলাদেশ প্রথমবারের মতো খসড়া এসওপি পেশ করেছে।
পিএটিএ বাংলাদেশ শাখার সাধারণ সম্পাদক তৌফিক রহমান বলেন, ‘করোনা পরবর্তী পর্যটনে এসওপি পর্যটকদের বিনোদন কেন্দ্র বাছাইয়ের ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ মানদ- হতে যাচ্ছে।’
পর্যটনের আরো ভাল ব্যবস্থাপনার লক্ষে পার্শ্ববর্তী দেশগুলো ইতোমধ্যে তাদের এসওপি প্রটোকলের খসড়া প্রস্তুত করেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘পর্যটন ব্যবসাকে আবার দাঁড় করাতে আমাদেরও একইভাবে প্রস্তুতি গ্রহণ করতে হবে।’
তিনি বলেন, জাতীয় পর্যায়ে এসওপি প্রণয়নে সরকারকে সহায়তা প্রদানের জন্য তারা খসড়া এসওপি প্রণয়ন করেছে।
পিএটিএ প্রণীত খসড়া এসওপি অনুযায়ী পর্যটন কেন্দ্রগুলোকে রেড, ইয়েলো ও গ্রিন জোনে চিহ্নিত করার পরামর্শ দেয়া হয়েছে।
তারা সুন্দরবন, পার্বত্য চট্টগ্রাম, নদী ভিত্তিক পর্যটনকেন্দ্র, প্রতœত্বাত্তিক নিদর্শন, জাদুঘরের মতো কম জনসমাগম হয় এমন স্থানগুলোকে গ্রিন জোন আর উৎসবস্থল, বাজার, বস্তি এলাকা, বন্দর ও স্টেশনগুলোকে রেড জোনে ভাগ করার পরামর্শ দিয়েছে।
এছাড়াও তারা সিডান গাড়িতে ১/২ জন অতিথি, ৭ আসনের ভ্যানে ২/৩ জন, ১২ আসনের ভ্যানে ৪/৫ জন, ২৯ আসনের মিনিবাসে ১০/১১ জন ও ৩৬ আসনের বাসে ১৬/১৭ জন অতিথি বহনের পরামর্শ দিয়েছে।
পিএটিএ’র এসওপিতে বলা হয়েছে, চালক, অতিথি ও সহকারীদেরমতো সেবা প্রদানকারীদের জন্য স্বা¯্য’ সনদ পেশ করা বাধ্যতামূলক করতে হবে এবং প্রতিদিন সকালে তাদের শরীরের তাপমাত্রা মাপা এবং সকলকে অবশ্যই মাস্ক, ক্যাপ, গগলস, হ্যান্ড গ্লোভস ব্যবহার করা নিশ্চিত করতে হবে।
ট্যুর অপারেটর অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (টোয়াব) আশঙ্কা করছে, পরিস্থিতির উন্নতি না ঘটলে চলতি বছর বাংলাদেশের ট্যুর অপারেটরদের প্রায় ছয় হাজার কোটি টাকার ক্ষতি হতে পারে।
পিএটিএ বাংলাদেশ আশঙ্কা করছে, করোনার কারণে বাংলাদেশের পর্যটন খাতে ২০২০ সালের জুন পর্যন্ত আনুমানিক ৯ হাজার ৭০৫ কোটি টাকা লোকসান হয়েছে।
গত ১৩ মার্চ ওয়ার্ল্ড ট্রাভেল অ্যান্ড ট্যুরিজম কাউন্সিল জানিয়েছে, করোনার কারণে এই খাতে বিশ্বব্যাপী ৫ কোটি চাকরী ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে।