বাজেটে পর্যটনকে অবহেলা করা হয়েছে: উবায়দুল মোক্তাদির চৌধুরী, এমপি
Tweet
আজ ১৭ মে ২০২০ খ্রি:, বুধবার সম্মিলিত পর্যটন জোট কর্তৃক আয়োজিত ‘পর্যটনে বাজেট’ শীর্ষক অনলাইন আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন বেসামরিক বিমান পরিবহণ ও পর্যটন মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান উবায়দুল মোক্তাদির চৌধুরী, এমপি। বিশেষ অতিথি ছিলেন ট্যুরিজম বোর্ডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা জাবেদ আহমেদ, বেসামরিক বিমান পরিবহণ ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের উপ-প্রধান (পরিকল্পনা) লুবনা ইয়াসমিন এবং বাসদের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ও সমাজতান্ত্রিক শ্রমিক ফ্রন্টের সভাপতি রাজেকুজ্জামান রতন। অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন সম্মিলিত পর্যটন জোটের আহবায়ক ও বাংলাদেশ ট্যুরিজম ফাউন্ডেশনের সভাপতি মোখছেুর রহমান।
জাতীয় সংসদে উত্থাপিত ৫ লক্ষ ৬৮ হাজার কোটি টাকার বাজেটের মধ্যে বেসামরিক বিমান পরিবহণ ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের চাহিদা মোতাবেক ৩ হাজার ৬৩৪ কোটি টাকার বাজেট অন্তর্ভূক্ত রয়েছে। উল্লেখ্য যে, এর মধ্যে প্রায় ৮০% বাজেট বেসামরিক বিমান পরিবহণ খাতে ব্যয় ধরা হয়েছে। তাই বাংলাদেশের এত বড় পর্যটন খাতের জন্য মাত্র ৭২৫ কোটি টাকার বরাদ্দ রাখার জন্য প্রধান অতিথি দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, বাজেটে পর্যটনকে অবহেলা করা হয়েছে। তিনি বলেন, সুন্দরবনসহ বাঘ সংরক্ষণ, সমুদ্র সৈকত এলাকা ও সিলেটের প্রাকৃতিক নিঃসর্গভিত্তিক পর্যটন গড়ে তোলার জন্য এই বাজেট অত্যন্ত অপ্রতুল। তাই তিনি সংসদে পাশ হওয়ার পূর্বে মন্ত্রণালয়কে এই বাজেট পুনর্মূল্যায়ন করার পরামর্শ দেন। উল্লেখ্য যে, সম্মিলিত পর্যটন জোট ২০২০-২০২১ অর্থবছরে পর্যটনের বিকভারি ও উন্নয়নের জন্য মোট ২৩ হাজার কোটি টাকার বাজেট প্রস্তাবনার জন্য দাবী জানিয়েছিল।
জাবেদ আহমেদ বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বলেন, পর্যটনকে মেইনস্ট্রিমিং করতে হবে যেন অন্যান্য মন্ত্রণালয় তাদের কর্মকান্ড ও বাজেট প্রণয়নের জন্য পর্যটনকে বিবেচনা করে। কারণ পর্যটন কোন একক স্বত্ত¡া নয়। বরং সড়ক, নৌ, সংস্কৃতি ইত্যাদি বহু মন্ত্রণালয়ের বাজেট ও কার্যক্রমে সাথে পর্যটন প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে সম্পৃক্ত। এই ব্যবস্থা পর্যটনের পণ্য বহুমুখীকরণে সহযোগিতা করবে। এক প্রস্তাবের প্রেক্ষিতে তিনি অবিলম্বে ট্যুরিজম স্যাটেলাইট একাউন্ট চালুর কার্যক্রম শুরু করার প্রতিশ্রæতি প্রদান করেন।
লুবনা ইয়াসমিন বলেন, বাজেট প্রণয়নে মন্ত্রণালয়ের একটি ধারাবাহিক প্রক্রিয়া রয়েছে যার মধ্য দিয়ে তা প্রণীত হয়। যেমন আগের বছরের ব্যয়িত অর্থের সাথে ১৫% হারে পরের বছরের বাজেট তৈরি হয়। তাই বাজেটের আয়তন হঠাৎ করে বাড়ে না। তিনি বলেন যে, পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সাথে পর্যটন খাতের সম্পর্ক খুবই দূর্বল। তাই মন্ত্রণালয় পর্যটনের বিষদ কিছু জানে না। এই প্রসঙ্গে তিনি সম্মিলিত পর্যটন জোটকে আশ^স্ত করে বলেন যে, পর্যটনে আপনাদের সুনির্দিষ্ট উন্নয়ন প্রস্তাবনা নিয়ে আসুন, আমরা বাস্তবায়ন করবো।
রাজেকুজ্জামান বলেন, পর্যটনের বর্তমান এবং ভবিষ্যতের ব্যাপক প্রভাব রয়েছে। পর্যটন তরুণদের মধ্যে দেশপ্রেম সৃষ্টি করতে পারে। তাই আজকের তরুণ পর্যটনের মাধ্যমে দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হলে পরবর্তী অন্তত ৪০ বছর তার প্রভাব থাকবে। তিনি এইখাতে সম্পৃক্ত বিপুল পরিমাণ মানবসম্পদ এবং জিডিপিতে অবদানের কথা উল্লেখ করে বলেন, এর অবকাঠামো ও মানবসম্পদ উন্নয়নে ব্যাপক মনযোগ দেওয়া উচিত। তিনি আরো বলেন, গার্মেন্টস্ সেক্টর বছরে ৩৪ বিলিয়ন ডলার রপ্তানি করলেও ২২ বিলিয়ন ডলারের আমদানি করে। অন্যদিকে ইউরোপের বাজার পড়ে গেলে গার্মেনটস্ও পড়ে যাবে। কিন্তু পর্যটনের রপ্তানি নিট এবং এই বাজার কখনো পড়বে না। তিনি জোর দিয়ে বলেন যে, বাংলাদেশের মতো দেশগুলির ভ্রমণ ব্যয় কমলে এখানে বিদেশিরা ভ্রমণে আসবেন। তাই বাজেটে একে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়ার কথা উল্লেখ করেন।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিব ও বিজনেস প্রমোশন কাউন্সিলের সমন্বয়কারী শফিকুজ্জমান বলেন, পর্যটন খাত করোনায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত। তাই বাজেটে একে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া উচিত। আটাবের সাবেক সভাপতি মঞ্জুর মোর্শেদ মাহবুব প্রশ্ন তোলেন যে, এয়ারলাইন্সের টিকেট থেকে এবং ট্রাভেল এজেন্টদের নিকট থেকে যে বিপুল পরিমাণ অর্থ সংগ্রহ করা হয়, তার উপর বাজেটের এত অর্থ এয়ারপোর্ট রক্ষণাবেক্ষণ এবং অন্যান্য কিছু ছোট ক্ষেত্র ছাড়া কোথায় এই বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যয় করে বেসামরিক বিমান পরিবহণে। সেই তুলনায় প্রতি বছর পর্যটনের জন্য অপ্রতুল বাজেট রেখে একে গুরুত্ব দিচ্ছে না মন্ত্রণালয়। এই খাতে তিনি সরকারের সহযোগিতামূলক হন্তক্ষেপ কামনা করেন।
অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, টোয়াবের পরিচালক (মিডিয়া এন্ড পাবলিকেশন) সাহেদ উল্লাহ, টুয়াকের সভাপতি রেজাউল করিম রেজা, ময়মনসিংহ ট্যুরিস্ট ক্লাবের সদস্য আবদুল কাদের চৌধুরী মুন্না ও সম্মিলিত পর্যটন জোটের ১ম সভাপতি শহিদুল ইসলাম সাগর।
সবশেষে উপস্থিত সকলকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন জয়িতা শেখ।