যাত্রী সেবার মান উন্নয়নে চালু হচ্ছে ব্যাগেজ হোম ডেলিভারি সার্ভিস
Tweet
হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের যাত্রী সেবার মান উন্নয়নে চালু হচ্ছে লেফট বিহাইন্ড ব্যাগেজ হোম ডেলিভারি সার্ভিস। পহেলা অক্টোবর থেকে কার্যকর হচ্ছে নতুন এই সার্ভিস। এখন থেকে বিমানবন্দরে আসা কোনও যাত্রীর ব্যাগ লেফ্ট-বিহাইন্ড হলে তার বাড়িতে ব্যাগ পৌঁছে দিতে বাধ্য থাকবে সংশ্লিষ্ট এয়ারলাইন্স। কোনও এয়ারলাইন্স হোম ডেলিভারি না দিলে সেই এয়ারলাইন্সকে গুনতে হবে জরিমানা। এই সেবা চালু হলে ব্যাগেজ লেফ্ট-বিহাইন্ড হওয়ার ঘটনা কমে আসবে বলে মনে করছে বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ।
তবে কোনও যাত্রীর ব্যাগে শুল্ক আরোপ হতে পারে, এমন কোনও পণ্য থাকলে সেটি বিমানবন্দরে এসে শুল্ক পরিশোধ করে ব্যাগ সংগ্রহ করতে হবে। এছাড়া কোনও এয়ারলাইন্স হোম ডেলিভারি ব্যর্থ হলে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন অনুসারে যাত্রী প্রতি ৫০ হাজার থেকে ২ লাখ টাকা পর্যন্ত জরিমানা দিতে হবে।
সূত্র জানায়, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে সংশ্লিষ্ট এয়ারলাইন্সগুলো লেফ্ট-বিহাইন্ড ব্যাগ হোম ডিলেভারি দেয়। বাংলাদেশেও এটি চালু করতে এয়ারলাইন্সগুলোকে ১ জুলাই পর্যন্ত সময় বেঁধে দেওয়া হয়। পরবর্তী সময়ে এয়ারলাইন্সগুলো ১ আগস্ট পর্যন্ত সময় বাড়ানোর অনুরোধ জানায়।
জানা গেছে, গত কিছুদিনে লেফ্ট-বিহাইন্ড ব্যাগেজ ঠিকমতো দিতে না পারায় সালামএয়ার ছাড়াও কাতার এয়ারওয়েজ, এয়ার অ্যারাবিয়া, মালিন্দো এয়ারলাইন্স, মালায়শিয়ান এয়ারলাইন্সসহ অনেক এয়ারলাইন্সকে জরিমানা গুনতে হয়েছে। বাজেট (লো কস্ট ক্যারিয়ার) এয়ারলাইন্সগুলোর ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি ব্যাগেজ লেফ্ট-বিহাইন্ড হয়।
সর্বশেষ ১২ সেপ্টেম্বর যাত্রীদের ব্যাগ দিতে না পারায় সালামএয়ারকে ১২ লাখ ২০ হাজার টাকা জরিমানা করেছেন হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ভ্রাম্যমাণ আদালত। সেদিন ফ্লাইটে ৬১ জন যাত্রীর ১০৮টি ব্যাগ লেফ্ট বিহাইন্ড হয়।
বিমানবন্দর সূত্র জানা গেছে, হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ভ্রাম্যমাণ আদালতে অন্যান্য অভিযোগের পাশাপাশি যাত্রীদের বেশি অভিযোগ ব্যাগেজ লেফ্ট-বিহাইন্ড নিয়ে। দীর্ঘ দুই বছরের বেশি সময় ধরে এ সংকট নিরসনে চেষ্টা চালান বিমানবন্দরের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মুহাম্মদ ইউসুফ। এয়ারলাইন্সগুলোকে ব্যাগেজ লেফ্ট-বিহাইন্ড কমাতে নির্দেশনাও দেওয়া হয়। ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে সাময়িক প্রতিকার হলেও ব্যাগেজ লেফ্ট-বিহাইন্ড বন্ধ করা যায়নি।
বিভিন্ন এয়ারলাইন্স ন্যারোবোডি (কম ধারণাক্ষমতা সম্পন্ন বিমান) বিমান ব্যবহার করলেও ব্যবসায়িক প্রতিযোগিতার কারণে যাত্রীদের ব্যাগেজ অ্যালাউইন্স বেশি দিতে হয়। কিন্তু ন্যারোবোডি বিমানগুলোর সক্ষমতা কম থাকায় ব্যাগজ লেফ্ট-বিহাইন্ড বেশি হয়। বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্য, সৌদিআরব ও মালায়শিয়াসহ যেসব দেশে বাংলাদেশিরা বেশি, সেসব দেশের ক্ষেত্রে লেফ্ট-বিহাইন্ড বেশি হয়।
লেফ্ট-বিহাইন্ডের কারণ প্রসঙ্গে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের মহাব্যবস্থাপক (জনসংযোগ) শাকিল মেরাজ বলেন, ‘ইচ্ছাকৃতভাবে কখনোই যাত্রীর ব্যাগ ফেলে রেখে আসা হয় না। লেফ্ট-বিহাইন্ড নানা কারণে হয়। একটি গন্তেব্যর ক্ষেত্রে জ্বালানি, যাত্রী, যাত্রীদের ব্যাগেজসহ বিমানের ওজন একটি নির্ধারণ মাত্রা থাকে। অনেক সময় আবহাওয়া খারাপ থাকলে যাত্রাপথ দীর্ঘ হতে পারে। এ কারণে ব্যাগেজ কমিয়ে জ্বালানি তেল বেশি নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন পাইলট। তখন কোনও কোনও যাত্রীর ব্যাগেজ লেফ্ট-বিহাইন্ড হয়। আবার কখনও যে দেশ থেকে যাত্রী আসছেন, সেই এয়ারপোর্টের সিকিউরিটি কোনও যাত্রীর ব্যাগ নিরাপত্তার কারণে চেকিংয়ে নিলেও লেফ্ট-বিহাইন্ড হতে পারে। চেকিংয়ের নির্ধারিত সময় পরে যখন যাত্রী আসেন, তখন ব্যাগেজ হোল্ডে ক্লোজ হয়ে গেলে সেই যাত্রীর ব্যাগ লেফ্ট-বিহাইন্ড হতে পারে। যে দেশ থেকে যাত্রী আসছেন, সেই এয়ারপোর্টে গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং অপারেটর যাত্রীদের ব্যাগ সময়মতো দিতে না পারলে বা ভুল করে ফেলে রাখলে বা অন্য ফ্লাইটে দিলেও লেফ্ট-বিহাইন্ড হয়।’
এ প্রসঙ্গে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের পরিচালক গ্রুপ ক্যাপ্টেন আব্দুল্লাহ আল ফারুক বলেন, ‘ব্যাগেজ লেফ্ট-বিহাইন্ড হলে যাত্রীদের দুর্ভোগে পড়তে হয় সবচেয়ে বেশি। যাত্রীদের দুর্ভোগ কমাতে হোম ডেলিভারি সেবা চালু করা হচ্ছে। এর ফলে কোনও যাত্রীকে লেফ্ট-বিহাইন্ড ব্যাগেজের জন্য আর এয়ারপোর্টে আসতে হবে না।’
নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মুহাম্মদ ইউসুফ যাত্রী সচেতন করতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও প্রচারণা চালান। তিনি জানান ব্যাগ লেফট বিহাইন্ড হলে সংশ্লিষ্ট এয়ারলাইন্স সেই ব্যাগ যাত্রীর বাড়িতে পৌঁছে দিবে। কোনো এয়ারলাইন্স যদি কোনো যাত্রীকে এয়ারপোর্টে এসে ব্যাগ সংগ্রহ করতে বলে তাহলে সেই যাত্রীকে ভ্রাম্যমাণ আদালতে যোগাযোগ করতে অনুরোধ জানান তিনি।