রেমিট্যান্স ও রিজার্ভে রেকর্ড
Tweet
করোনা সংকটে স্থবির হয়ে পড়েছে বিশ্ব অর্থনীতি। ভালো নেই প্রবাসীরা। দেশের মতো প্রবাসীদের অনেকে কর্মহীন হয়ে পড়েছেন। এর মধ্যেই জুনে রেকর্ড ১৮৩ কোটি ডলারের রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা।
এর আগে এক মাসে সর্বোচ্চ ১৭৫ কোটি ডলার রেমিট্যান্সের রেকর্ড ছিল গত বছরের মে মাসে। করোনা সংকটের মধ্যেই জুন মাসে রেমিট্যান্স ব্যাপক বৃদ্ধির ওপর ভর করে পুরো অর্থবছরের প্রবৃদ্ধি শেষ পর্যন্ত দুই অঙ্কে ঠেকলো। ২০১৯-২০ অর্থবছরে ব্যাংকিং চ্যানেলে মোট এক হাজার ৮২০ কোটি ডলার সমপরিমাণ অর্থ দেশে এসেছে। ২০১৮-১৯ অর্থবছরের তুলনায় যা ১৭৯ কোটি ডলার বা ১০ দশমিক ৮৮ শতাংশ বেশি।
ভালো রেমিট্যান্স এবং প্রচুর বিদেশী ঋণের ফলে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভেও রেকর্ড হয়েছে। বৃহস্পতিবার রিজার্ভের পরিমাণ গিয়ে ঠেকেছে ৩৬ দশমিক ১৪ বিলিয়ন বা তিন হাজার ৬১৪ কোটি ডলার। এর আগে গত জুন মাসে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ প্রথমবারের মতো ৩৪ ও ৩৫ বিলিয়ন ডলারের মাইলফলক অতিক্রম করে। বিশ্ব অর্থনীতির স্থবিরতার কারণে হুন্ডি পথে বৈদেশিক মুদ্রার চাহিদা ব্যাপক কমে যাওয়া ও সরকারের প্রণোদনা অব্যাহত থাকায় এভাবে জুনে রেমিট্যান্স বেড়েছে বলে সংশ্লিষ্টদের ধারণা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক কাজী ছাইদুর রহমান সমকালকে বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক ও সরকারের নীতি সহায়তা এবং হুন্ডি পথে বৈদেশিক মুদ্রার চাহিদা কমার ফলে রেমিট্যান্স বেড়েছে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, স্বাভাবিক সময়ে প্রবাসী আয়ের উল্লেখযোগ্য অংশ আসে হুন্ডি হয়ে। সাধারণত অর্থপাচারের জন্য একটি চক্র হুন্ডির মাধ্যমে ডলার কিনে রেমিটারের সুবিধাভোগির হাতে টাকা পৌঁছে দেয়। ব্যাংকের চেয়ে বেশি দর এবং কোনো ঝামেলা ছাড়াই অর্থ পৌঁছানোর প্রলোভন দেখিয়ে প্রবাসীর কাছ থেকে যা কিনে নেওয়া হয়। তবে এখন বিশ্বব্যাপী খারাপ অবস্থার কারণে হুন্ডি পথে ডলারের চাহিদা নেই বললেই চলে। সরকারের ২ শতাংশ হারে প্রণোদনার কারণে অনেকে এখন ব্যাংকমুখী হয়েছেন। আবার প্রবাসে ভালো অবস্থানে থাকা অনেকেই পরিবারের পাশাপাশি দরিদ্রদের সহযোগিতার জন্য আগের চেয়ে বেশি অর্থ পাঠাচ্ছেন। এছাড়া এরই মধ্যে অনেক দেশে লকডাউন শিথিলতার কারণে কাজে ফিরতে শুরু করেছেন। কেউ-কেউ জমানো টাকা দিয়ে নিজের আত্মীয়-স্বজনকে সহযোগিতা করছেন। এসব কারণে রেমিট্যান্স বাড়ছে।
পূবালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম এ হালিম চৌধুরী সমকালকে বলেন, প্রণোদনার জন্য অধিকাংশই এখন ব্যাংকিং চ্যানেলে টাকা পাঠাচ্ছেন। এছাড়া করোনাভাইরাসের এই সংকটে প্রবাসীরা আত্মীয়-স্বজনকে নানাভাবে সহযোগিতা করছেন। সব মিলিয়ে রেমিট্যান্স বাড়ছে।
করোনাভাইরাসের প্রভাব শুরুর পর বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অনেকেই কর্মহীন হয়ে পড়ায় ধারণা করা হয়েছিল এবার রেমিট্যান্সে নেতিবাচক প্রবৃদ্ধি হবে। গত মার্চ, এপ্রিল ও মে এই তিন মাসে তার একটা প্রভাবও দেখা দিয়েছিল। ওই তিন মাসে ১৬ দশমিক ৫৩ শতাংশ রেমিট্যান্স কমে মাত্র ৩৮৭ কোটি ডলারে নেমে আসে। তারপরও আগের ভালো অবস্থানের কারণে মে পর্যন্ত প্রবৃদ্ধি ছিল ৮ দশমিক ৭৮ শতাংশ। জুনে রেকর্ড রেমিট্যান্সের ফলে শেষ পর্যন্ত প্রবৃদ্ধি গিয়ে ঠেকল ১০ দশমিক ৮৮ শতাংশে। অবশ্য করোনা সংকট শুরুর আগে গত ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত রেমিট্যান্সে প্রবৃদ্ধি ছিল ২০ দশমিক ২০ শতাংশ।