জ্যোৎস্না ছড়ানো চাঁদের গল্পে ইমদাদুর রহমান
Tweet
পর্যটন বিষয়ক অনলাইন নিউজ পোর্টাল ‘পর্যটনিয়া’ পর্যটন শিল্পের নানা সমস্যা ও সম্ভাবনা তুলে ধরে আসছে নিয়মিত। দেশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পর্যটন বিষয়ে পড়ালেখা করছে এমন অনেক ছাত্র-ছাত্রী যথাযথ তথ্যের অভাবে নিজের ক্যারিয়ার নিয়ে শঙ্কিত। সুতরাং সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকে পর্যটনের সাবেক ছাত্র-ছাত্রীদের ‘ক্যারিয়ার স্টোরি’ প্রকাশ করার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে পর্যটনিয়া। পর্যটন বিষয়ে পড়ালেখা করার পর তাঁদের আজকের অবস্থান একজন ছাত্রকে হয়তো তার নিজস্ব ক্যারিয়ার গড়তে স্বপ্ন দেখাবে। প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে সাহসী করে তুলবে। পর্যটনের সাবেক ছাত্রদের ‘ক্যারিয়ার স্টোরি’ হোক শঙ্কিত ছাত্রদের দিকনির্দেশনা আর সাহসী ছাত্রদের প্রেরণা। আমাদের এই পর্বের আয়োজন জনাব ইমদাদুর রহমানকে নিয়ে। তিনি প্রিন্সিপাল অফিসার হিসেবে কর্মরত আছেন সোনালী ব্যাংক লিমিটেডে। ট্যুরিজম এন্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট বিষয় নিয়ে পড়াশোনা করে যারা পর্যটনের বাইরে ক্যারিয়ার গড়তে সক্ষম হয়েছেন তিনি তাঁদের অন্যতম।
স্কুল ও কলেজ জীবন কিছুটা নিজ জেলা কুষ্টিয়া বাকিটা ঝিনাইদহে কাটানোর পরে ঢাকায় চলে আসেন ইঞ্জিনিয়ারিং পড়তে। সাফল্যের সাথে কম্পিউটার সাইন্স নিয়ে বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারিং পাশও করেন। কিন্তু ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে ক্যারিয়ার গড়তে মন যেন ঠিক সায় দিচ্ছে না।কিন্তু কোথায় যেন একটা অতৃপ্তি অনুভব করছেন। কলেজ জীবনে শৈলকূপা শাহী মসজিদ, নলডাঙা মন্দির থেকে শুরু করে দত্তনগর কৃষি খামার, মল্লিকপুরের বটগাছ, ঢোল সমুদ্র দীঘি, লালন শাহের ভিটা চষে বেড়ানো ইমদাদুর রহমানের অন্তর শেষ পর্যন্ত হঠাৎ একদিন বলেই উঠলো তিনি ইঞ্জিনিয়ার না হয়ে, হবেন পর্যটন পেশাজীবি।
মুলত ইমদাদুর রহমানের অন্তর কৈশোর থেকেই সুপ্তভাবে বহন করে চলছে পর্যটনের প্রতি একরাশ ভালবাসা। সেই নিখাঁদ ভালবাসার টান উপেক্ষা করতে না পেরেই কম্পিউটার সাইন্স নিয়ে বিএসসি পাশ করার পরেও স্রোতের বিপক্ষে গিয়ে তিনি এমবিএ ভর্তি হন ট্যুরিজম এন্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট বিভাগে। যদিও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমবিএ শেষ করার আগেই চাকরি পেয়ে যান সোনালী ব্যাংক লিমিটেডে তবুও সেই আদি ও অকৃত্রিম ভালবাসার টানেই সারাদিন অফিস করে সন্ধ্যার পর ক্যাম্পাসে চলে আসেন ক্লাস করতে।
পর্যটন শিল্পে ক্যারিয়ার গড়ার দুর্নিবার আকর্ষণ থেকে যিনি কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার সম্ভাবনা দূরে ঠেলে দিলেন, সারাদিন ব্যাংকের চাকরি করে বহু ত্যাগ-তিতিক্ষার বিনিময়ে সন্ধ্যায় পর্যটনের ক্লাস করলেন, এক দশক পরে এসেও ভাগ্যের লিখনে তিনিই আজও ব্যাংকারই রয়ে গেলেন। এমনিতে এই প্রতিযোগিতামূলক চাকরির বাজারে ব্যাংকে চাকরি পাওয়াটা চাট্টিখানি ব্যাপার নয়, কিন্তু তিনি তো ইমদাদুর রহমান, পর্যটনের জন্য যিনি দুরন্ত ষাঁড়ের চোখে বেঁধে দিয়েছেন লাল কাপড়। তিনি কেন ব্যাংকের ছকবদ্ধ জীবনে অভ্যস্ত হবেন! তিনি হবেন ট্যুর অপারেটরের মতো ওয়ান্ডারার, আজ টেকনাফ কাল তেতুলিয়া, অথবা তিনি হবেন ফাইভ স্টার হোটেলের ফ্রন্ট অফিস ম্যানেজার, সাত সমুদ্দুর তের নদীর ওপার থেকে রাত-বিরেতে ফোন আসবে তিনি হৃদয়ের সবটুকু আবেগ আতিথিয়েতা নিংড়ে দিয়ে বলবেন, হ্যালো, দিস ইজ ইমদাদুর রহমান ফ্রম ঢাকা শেরাটন হোটেল, হাউ মে আই হেল্প ইউ স্যার। কিন্তু পর্যটন শিল্পে ক্যারিয়ার গড়ার স্বপ্নটা তাঁর জন্য যেন বরুণাসম, বিশ্বসংসার তন্ন তন্ন করে ১০৮ টা নীলপদ্ম খুঁজে এনেও অধরাই থেকে যাচ্ছে বরুণা।
সরকারি চাকরিজীবী বাবা আর গৃহিণী মায়ের চার সন্তানের মধ্যে তিনি সর্বকনিষ্ঠ। রত্নগর্ভা পুরস্কারে ভূষিত মায়ের বাকি সন্তানদের মতো তিনিও নিয়মানুবর্তিতার মধ্যেই বড় হয়েছেন। ব্যাক্তি জীবনে ইমদাদুর রহমান নিজেও যথেষ্ট সময় ও শৃঙ্খলা রক্ষা করেই চলেন। তার সহধর্মিণীও একজন ব্যাংকার। পর্যটনে ক্যারিয়ার গড়তে না পারার আক্ষেপ থেকেই হয়তো প্রিয় সহধর্মিণীকে সাথে নিয়ে মাঝে মাঝেই পাহাড়, সমুদ্র, হাওর-বাওর, নদী-নালা, জল ও জঙ্গল ভ্রমণে বেরিয়ে পরেন। সহধর্মিণীর প্রশ্রয় আর নিজের ভিতরে লালিত পর্যটনপ্রেমের কারণেই ব্যাংকার হয়েও তিনি একজন পুরোদস্তুর পরিব্রাজক। ছুটিছাটা পেলেই বেড়িয়ে পরেন কোনো না কোনো গন্তব্যে।
চাকরি, ঘুরে বেড়ানো, সংসার ইত্যাদি কাজে ব্যস্ত থেকেও ইমদাদুর রহমান নিজেকে জড়িয়েছেন কিছু সামাজিক ও সেবামূলক সংগঠনের সাথে। কিছু সেবামূলক সংগঠনের পাশাপাশি তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এমবিএ এসোসিয়েশনের এসিস্ট্যান্ট অর্গানাইজিং সেক্রেটারির দ্বায়িত্ব দক্ষতার সাথে পালন করছেন।
ট্যুরিজম এন্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট পড়তে গিয়ে কাস্টমার সার্ভিস, হসপিটালিটি, ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট ইত্যাদি বিষয়গুলো সম্পর্কে তাত্বিক জ্ঞান অর্জন করেছেন। সেসব জ্ঞানেরই বাস্তবিক প্রয়োগের মাধ্যমে কর্মজীবনে তিনি সুনামের সাথে কাস্টমার সার্ভিস দিচ্ছেন, ছুটিছাটায় তৈরি করছেন অফিস ট্যুর প্ল্যান। সহযোগিতা করছেন এমবিএ এসোসিয়েশনের ইফতার পার্টি, গেট টুগেদার বা এনুয়্যাল পিকনিকের মতো বড় ইভেন্টগুলোও আয়োজন করতে।
আসলে বিদ্যা এবং অভিজ্ঞতা কোনটাই বিফলে যায় না। ট্যুরিজম এন্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট পড়ে ব্যাংকে চাকরি করছেন। ব্যাংকতো মূলত একটি সেবা নির্ভর প্রতিষ্ঠান। সেবামূলক মানষিকতা নিয়ে পেশাগত দ্বায়িত্ব পালন করে ব্যাংকার হিসেবে তিনি নিজেকে প্রতিনিয়ত সমৃদ্ধ করে তুলছেন। প্রতিযোগিতার বাজারে টিকে থাকতে ব্যাংকগুলোকেও নতুন নতুন পণ্য ও সেবা চালু করতে হচ্ছে। পর্যটন প্রেমী ইমদাদুর রহমানের ভবিষ্যৎ নিয়ে এখনো একটি পর্যটনকেন্দ্রীক স্বপ্ন আছে। পর্যটনের একজন সাবেক ছাত্র হিসেবে ভবিষ্যতে ট্যুরিজম ফাইন্যান্স ও ট্যুরিজম ইনভেস্টমেন্ট নিয়ে কাজ করার স্বপ্ন দেখেন। সেই স্বপ্ন পূরণ হওয়ার মধ্য দিয়ে ইমদাদুর রহমান আরও অনেক দূর পর্যন্ত এগিয়ে যাক পর্যটনিয়া পরিবার কায়মনোবাক্যে সেই কামনা করে।
৪ thoughts on “জ্যোৎস্না ছড়ানো চাঁদের গল্পে ইমদাদুর রহমান”
Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.
অনেক ভালো লাগলো । অভিনন্দন ইমদাদ সাহেব আপনার বিপ্লবী জীবন আমাদেরকে অনুপ্রাণিত করবে। আরো বেশি সফলতার শুভকামনা রইল। আন্তরিক পরযটনিয়া ও তার সম্পাদক মহোদয়কে ।
পর্যটন এর প্রতি আগ্রহ জাগ্রত থাকুক ।
আমাদের সেই ছোট্ট মামুন আজ এত্তো বড় কিছ! অভিনন্দন মামুন, আরো বড় হও, আমরা তোমাকে নিয়ে গর্ব করি।
আমাদের সেই ছোট্ট মামুন আজ এত্তো বড় কিছু! অভিনন্দন মামুন, আরো বড় হও, আমরা তোমাকে নিয়ে গর্ব করি।