আজ দুপুরে স্বাস্থ্য অধিদফতরের করোনাভাইরাস সংক্রান্ত নিয়মিত অনলাইন হেলথ বুলেটিনে অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা এসব তথ্য জানান। তিনি জানান, গত ২৪ ঘন্টায় করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে ৪৬ জন মারা গেছেন। এখন পর্যন্ত মারা গেছেন ২ হাজার ১৯৭ জন।
গতকালের চেয়ে আজ ৯ জন কম মারা গেছেন। গতকাল মারা গেছেন ৫৫ জন। করোনা শনাক্তের বিবেচনায় আজ মৃত্যুর হার ১ দশমিক ২৮ শতাংশ। আগের দিনও এই হার ছিল ১ দশমিক ২৮ শতাংশই।
অতিরিক্ত মহাপরিচালক জানান, গত ২৪ ঘন্টায় ১৫ হাজার ৬৭২ জনের নমুনা পরীক্ষায় ৩ হাজার ৪৮৯ জনের দেহে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। গতকালের চেয়ে আজ ৪৬২ জন বেশি শনাক্ত হয়েছেন। গতকাল ১৩ হাজার ১৭৩ জনের নমুনা পরীক্ষায় শনাক্ত হয়েছিলেন ৩ হাজার ২৭ জন।
তিনি জানান, দেশে এ পর্যন্ত মোট ৮ লাখ ৮৯ হাজার ১৫২ জনের নমুনা পরীক্ষায় ১ লাখ ৭২ হাজার ১৩৪ জনের দেহে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। মোট পরীক্ষার বিবেচনায় শনাক্তের হার ১৯ দশমিক ৩৬ শতাংশ। গত ২৪ ঘন্টায় নমুনা পরীক্ষার বিবেচনায় শনাক্তের হার ২২ দশমিক ২৬ শতাংশ। আগের দিন এ হার ছিল ২২ দশমিক ৯৮ শতাংশ। আগের দিনের চেয়ে আজ শনাক্তের হার শূন্য দশমিক ৭২ শতাংশ কম।
ডা. নাসিমা সুলতানা জানান, ‘করোনাভাইরাস শনাক্তে গত ২৪ ঘন্টায় নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে ১৫ হাজার ৮৮৩ জনের। আগের দিন নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছিল ১৩ হাজার ৪৯১ জনের। গতকালের চেয়ে আজ ২ হাজার ৩৯২টি নমুনা বেশি সংগ্রহ করা হয়েছে। গত ২৪ ঘন্টায় দেশের ৭৫টি পরীক্ষাগারে নমুনা পরীক্ষা হয়েছে ১৫ হাজার ৬৭২ জনের। আগের দিন নমুনা পরীক্ষা হয়েছিল ১৩ হাজার ১৭৩ জনের। গত ২৪ ঘন্টায় আগের দিনের চেয়ে ২ হাজার ৪৯৯টি বেশি নমুনা পরীক্ষা হয়েছে।
তিনি জানান, যারা মারা গেছেন তাদের মধ্যে ৩৮ জন পুরুষ এবং ৮ জন নারী। এখন পর্যন্ত মৃত্যুবরণকারীদের মধ্যে পুরুষ ১ হাজার ৭৪১ জন; ৭৯ দশমিক ২৪ শতাংশ এবং নারী ৪৫৬ জন; ২০ দশমিক ৭৬ শতাংশ। গত ২৪ ঘণ্টায় ঢাকা বিভাগে ১২ জন, চট্টগ্রাম বিভাগে ১৪ জন, বরিশাল বিভাগে ৩ জন, রাজশাহী বিভাগে ৩ জন, খুলনা বিভাগে ৯ জন, সিলেটে ৪ জন এবং রংপুরে ১ জন মারা গেছেন। এদের মধ্যে হাসপাতালে মারা গেছেন ৩৮ জন এবং বাসায় মারা গেছেন ৮ জন।
বয়স বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ৯১ থেকে ১০০ বছরের মধ্যে ১ জন, ৮১ থেকে ৯০ বছরের মধ্যে ৩ জন, ৭১ থেকে ৮০ বছরের মধ্যে ৬ জন, ৬১ থেকে ৭০ বছরের মধ্যে ১৬ জন, ৪১ থেকে ৫০ বছরের মধ্যে ১ জন, ৫১ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে ১৫ জন, ৩১ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে ২ জন, ২১ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে ২ জন মারা গেছেন।
নাসিমা সুলতানা জানান, এ পর্যন্ত মৃত্যুবরণকারীদের মধ্যে শূন্য থেকে ১০ বছরের মধ্যে দশমিক ৫৯ শতাংশ, ১১ থেকে ২০ বছরের মধ্যে ১ দশমিক ২৪ শতাংশ, ২১ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে ৩ দশমিক ৩২ শতাংশ, ৩১ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে ৭ দশমিক ১৫ শতাংশ, ৪১ থেকে ৫০ বছরের মধ্যে ১৪ দশমিক ৭৫ শতাংশ, ৫১ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে ৩২ দশমিক শূন্য ৯ শতাংশ এবং ষাটোর্ধ্ব বয়সের ৪৩ দশমিক ৯৭ শতাংশ।
এ পর্যন্ত মৃত্যুবরণকারীদের মধ্যে বিভাগওয়ারী ঢাকা বিভাগে ৫০ দশমিক ৮০ শতাংশ, চট্টগ্রাম বিভাগে ২৫ দশমিক ৯৯ শতাংশ, রাজশাহী বিভাগে ৫ দশমিক শূন্য ১ শতাংশ, খুলনা বিভাগে ৪ দশমিক ৮২ শতাংশ, বরিশাল বিভাগে ৩ দশমিক ৬৯ শতাংশ, সিলেট বিভাগে ৪ দশমিক ৩২ শতাংশ, রংপুর বিভাগে ৩ শতাংশ এবং ময়মনসিংহ বিভাগে ২ দশমিক ৩৭ শতাংশ।
তিনি জানান, ‘ঢাকা মহানগরীতে কোভিড ডেডিকেটেড হাসপাতালে সাধারণ শয্যা সংখ্যা ৬ হাজার ৩০৫টি, সাধারণ শয্যায় ভর্তিকৃত রোগীর সংখ্যা ২ হাজার ২১৩ জন এবং শয্যা খালি আছে ৪ হাজার ৯২টি। ঢাকা মহানগরীতে আইসিইউ শয্যা সংখ্যা ১৪২টি, আইসিইউ শয্যায় ভর্তি আছে ১০২ জন এবং খালি আছে ৪০টি শয্যা। ঢাকা মহানগরীতে ভেন্টিলেটর সংখ্যা ১৫০টি। চট্টগ্রাম মহানগরীতে সাধারণ শয্যা সংখ্যা ৬৫৭টি, সাধারণ শয্যায় ভর্তিকৃত রোগীর সংখ্যা ৩১৪ জন এবং শয্যা খালি আছে ৩৪৩ টি। চট্টগ্রাম মহানগরীতে আইসিইউ শয্যা সংখ্যা ৩৯টি, আইসিইউ শয্যায় ভর্তি আছে ২০ জন এবং খালি আছে ১৯টি শয্যা। চট্টগ্রাম মহানগরীতে ভেন্টিলেটর সংখ্যা ৩৮টি। সারাদেশে সাধারণ শয্যা সংখ্যা ১৪ হাজার ৯৪৫টি, আইসিইউ শয্যা সংখ্যা ৩৯৪টি। সারাদেশে অক্সিজেন সিলিন্ডারের সংখ্যা ১১ হাজার ৭৬৪টি। সারাদেশে হাই ফ্লো নেজাল ক্যানেলা সংখ্যা ১৩২টি এবং সারাদেশে অক্সিজেন কনসেনট্রেটর ৯৮টি। সারাদেশে সাধারণ শয্যায় ভর্তিকৃত রোগীর সংখ্যা ৪ হাজার ১৭৬ জন, আইসিইউ শয্যায় ভর্তিকৃত রোগীর সংখ্যা ১৯৪ জন। সারাদেশে ২৪ ঘন্টায় ভর্তিকৃত রোগীর সংখ্যা ৪৪৫ জন এবং ছাড়প্রাপ্ত রোগীর সংখ্যা ৬৩৯ জন।
০১৩১৩-৭৯১১৩০, ০১৩১৩-৭৯১১৩৮, ০১৩১৩৭৯১১৩৯ এবং ০১৩১৩৭৯১১৪০ এই নম্বরগুলো থেকে হাসপাতালের সকল তথ্য পাওয়া যাবে। কোন হাসপাতালে কতটি শয্যা খালি আছে। কত রোগী ভর্তি ও কতজন ছাড় পেয়েছেন এবং আইসিইউ শয্যা খালি আছে কি না এই ফোন নম্বরগুলোতে ফোন করে তা জানা যাবে বলে তিনি জানান।
নাসিমা সুলতানা জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় আইসোলেশনে রাখা হয়েছে ৭৯২ জনকে। বর্তমানে আইসোলেশনে আছেন ১৬ হাজার ৮৫৬ জন। ২৪ ঘণ্টায় আইসোলেশন থেকে ছাড় পেয়েছেন ৮০৯ জন, এখন পর্যন্ত ছাড়া পেয়েছেন ১৬ হাজার ২৮৭ জন। এখন পর্যন্ত আইসোলেশন করা হয়েছে ৩৩ হাজার ১৪৩ জনকে।
তিনি জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় প্রাতিষ্ঠানিক ও হোম কোয়ারেন্টিন মিলে কোয়ারেন্টিন করা হয়েছে ২ হাজার ৬৯১ জনকে। এখন পর্যন্ত ৩ লাখ ৮৪ হাজার ২৯৯ জনকে কোয়ারেন্টিন করা হয়েছে। কোয়ারেন্টিন থেকে গত ২৪ ঘণ্টায় ছাড়া পেয়েছেন ৩ হাজার ১৩৪ জন, এখন পর্যন্ত মোট ছাড়া পেয়েছেন ৩ লাখ ২১ হাজার ৩০১ জন। বর্তমানে মোট কোয়ারেন্টিনে আছেন ৬২ হাজার ৯৯৮ জন।
অতিরিক্ত মহাপরিচালক জানান, বিভিন্ন ক্যাটাগরির গ্লাভস মজুদ আছে ৯ লাখ ৪৪ হাজার ২৭৪টি, বিভিন্ন ক্যাটাগরি ও লেভেলের মাস্ক মজুদ আছে ৩১ লাখ ৫৬ হাজার ৯৩৬টি। এছাড়া, ব্যক্তিগত সুরক্ষা সামগ্রী (পিপিই) ১১ লাখ ৬৫ হাজার ১৩৬টি এবং গগলস ১২ লাখ ৩১ হাজার ৯৭৩টি মজুদ রয়েছে।
গত ২৪ ঘন্টায় হটলাইন নম্বরে ১ লাখ ৯০ হাজার ৫৯৯টি এবং এ পর্যন্ত প্রায় ১ কোটি ৫২ লাখ ৯৪ হাজার ৩৮টি ফোন কল রিসিভ করে স্বাস্থ্য সেবা ও পরামর্শ দেয়া হয়েছে বলে তিনি জানান।
তিনি জানান, করোনাভাইরাস চিকিৎসা বিষয়ে এ পর্যন্ত ১৬ হাজার ৪৫৪ জন চিকিৎসক অনলাইনে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেছেন। গত ২৪ ঘন্টায় যুক্ত হয়েছেন ১৬ জন। এদের মধ্যে ৪ হাজার ২১৭ জন স্বাস্থ্য বাতায়ন ও আইইডিসিয়ার’র হটলাইনগুলোতে স্বেচ্ছাভিত্তিতে সপ্তাহে ৭ দিন ২৪ ঘন্টা জনগণকে চিকিৎসাসেবা ও পরামর্শ দিচ্ছেন।
ডা. নাসিমা সুলতানা জানান, দেশের বিমানবন্দর, নৌ, সমুদ্রবন্দর ও স্থলবন্দর দিয়ে গত ২৪ ঘন্টায় ১ হাজার ৪৮৪ জনসহ সর্বমোট বাংলাদেশে আগত ৭ লাখ ৪৬ হাজার ৬৪৬ জনকে স্ক্রিনিং করা হয়েছে।
দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার পরিস্থিতি তুলে ধরে অতিরিক্ত মহাপরিচালক জানান, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ৭ জুলাই পর্যন্ত রিপোর্ট অনুযায়ী ২৪ ঘন্টায় দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় করোনা আক্রান্ত হয়েছেন ২৬ হাজার ৮৭০ জন। এ পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছেন ৯ লাখ ৭৪ হাজার ৩৮৯ জন। গত ২৪ ঘন্টায় ৫৮২ জন এবং এ পর্যন্ত ২৫ হাজার ৬১৫ জন মারা গেছেন।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ৭ জুলাই পর্যন্ত রিপোর্ট অনুযায়ী, সারাবিশ্বে ২৪ ঘন্টায় করোনা আক্রান্ত হয়েছেন ১ লাখ ৭২ হাজার ৫১২ জন। এ পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছেন ১ কোটি ১৫ লাখ ৩০২ জন। ২৪ ঘন্টায় ৩ হাজার ৪২৫ জন এবং এ পর্যন্ত ৫ লাখ ৩৫ হাজার ৭৫৯ জন মারা গেছেন বলে তিনি জানান।
করোনায় সুস্থতা ৮০ হাজার ছাড়িয়েছে, আরও ৪৬ জনের মৃত্যু
Tweet
দেশে করোনা শনাক্তের ১২৩তম দিনে এই ভাইরাস থেকে ৮০ হাজারের বেশি মানুষ সুস্থ হয়েছেন। গত ২৪ ঘন্টায় হাসপাতাল এবং বাসায় মিলিয়ে সুস্থ হয়েছেন ২ হাজার ৭৩৬ জন। এ পর্যন্ত সুস্থ হয়েছেন ৮০ হাজার ৮৩৮ জন। গতকালের চেয়ে আজ ৭৮৩ জন বেশি সুস্থ হয়েছেন। গতকাল সুস্থ হয়েছিলেন ১ হাজার ৯৫৩ জন।আজ শনাক্ত বিবেচনায় সুস্থতার হার ৪৬ দশমিক ৯৬ শতাংশ। আগের দিন এই হার ছিল ৪৬ দশমিক ৩১ শতাংশ। আগের দিনের চেয়ে আজ সুস্থতার হার শূন্য দশমিক ৬৫ শতাংশ বেশি।