দল নিবন্ধনে বিতর্কিত আইনের খসড়ায় ইসির অনুমোদন
Tweet
বিরোধিতা ও বিতর্কের মধ্যে স্থানীয় সরকারের বিভিন্ন স্তর ও পদ-পদবির নাম পরিবর্তনসহ গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের বিশেষ অংশ নিয়ে নতুন আইনের খসড়ায় অনুমোদন দিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নূরুল হুদার সভাপতিত্বে বুধবার কমিশনের সভায় একজন নির্বাচন কমিশনারের আপত্তির মধ্যেই প্রস্তাবিত ‘রাজনৈতিক দল নিবন্ধন আইনের’ খসড়া অনুমোদিত হয়।
পরে ইসি সচিব মো. আলমগীর সাংবাদিকদের বলেন, সার্বিক দিক পর্যালোচনায় সংযোজন-বিয়োজন করে কিছু নির্দেশনাসহ খসড়া আইনের অনুমোদন দিয়েছে কমিশন। তিনি বলেন ‘আগামী সপ্তাহের মধ্যেই সংযোজন-বিয়োজন করে কমিশনারদের কাছে উপস্থাপন করা হবে। কমিশন দেখার পর পরবর্তী পদক্ষেপের জন্য সরকারের কাছে পাঠানো হবে।’
এর আগে সভায় প্রস্তাবিত ‘রাজনৈতিক দল নিবন্ধন আইনের’ বিরোধিতা করে ‘নোট অব ডিসেন্ট’ দেন নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার।বিএনপিসহ কয়েকটি রাজনৈতিক দলের বিরোধিতার মধ্যে প্রথম আইনটি নিয়ে নির্বাচন কমিশনের ভেতর থেকেই আনুষ্ঠানিকভাবে ভিন্ন মত এল এবার। করোনা মহামারীর মধ্যে জুনে নতুন আইনটির বিষয়ে মতামত চায় ইসি।
নতুন আইন প্রণয়নের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে প্রশ্ন তোলার পাশাপাশি বছরের পর ধরে প্রচলিত স্থানীয় সরকার পরিষদের নাম ও পদ-পদবি পরিবর্তনের সিদ্ধান্তে আপত্তি জানিয়ে বিএনপিসহ কয়েকটি রাজনৈতিক দল তা থেকে সরে আসার আহ্বান জানিয়ে আসছে।
বুধবার কমিশন সভা শেষে নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমি এই সিদ্ধান্তের সম্পূর্ণ বিরোধিতা করি। আমি এখানে বলেছি, আইনের প্রয়োজনীয়তা নেই। তারপরেও আমার কথাটা তো কেউ মেনে নিচ্ছে না। যার জন্য বাধ্য হয়ে রেকর্ড দেখার জন্য আমি নোট অব ডিসেন্ট দিয়েছি।’ লিখিত বক্তব্যে নতুন আইনের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, আরপিওর অংশবিশেষ নিয়ে পৃথকভাবে আইন প্রণয়ন হটকারী সিদ্ধান্ত।
এই প্রস্তাব গৃহীত হলে ১৯৭২ সালের আরপিওর অঙ্গহানি ঘটবে, যাতে একে ‘বিকলাঙ্গ’ মনে হবে। তিনি বলে, ‘রাজনৈতিক দলগুলো ও সংশ্লিষ্টদের কাছ থেকে ৫০টি মতামত পাওয়া গেছে, তাতে এসব পদ-পদবি পরিবর্তনের বিষয়ে বিতর্ক রয়েছে।’
আইনের খসড়া নিয়ে মতামত চাওয়ার আগে আদৌ আইনটির প্রয়োজনীয়তা ছিল কিনা তা নিয়ে আলোচনা এবং আরও যাচাই-বাছাইয়ের প্রয়োজন ছিল বলে এই নির্বাচন কমিশনার মনে করেন।
আইনটির বিষয়ে ইসির সচিব জানান, রাজনৈতিক দল নিবন্ধনের বিষয়টি ১৯৭২ সালের গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশে ছিল না। ২০০৮ সালে আরপিওতে তা যুক্ত করা হয়েছে। আলাদা আইনের কথা থাকলেও তখন সময়ের অভাবে তড়িঘড়ি করে এটিকে আরপিওতে যুক্ত করা হয়। তিনি বলেন ‘বর্তমান কমিশন রাজনৈতিক দলের নিবন্ধনের বিষয়টি আলাদা করে আইন করার প্রয়োজন মনে করছে। তারা মনে করছেন আইনের এই অংশটি আরপিও থেকে বের করে স্বতন্ত্র করা উচিত। তাছাড়া আপনারা জানেন, সরকারের একটি সিদ্ধান্ত আছে সব আইন বাংলায় প্রণয়ন করার, যার কারণে এটি বাংলায় করা হচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘সংসদ নির্বাচনের পাশাপাশি স্থানীয় সরকার পরিষদ দলীয় প্রতীকে অনুষ্ঠিত হচ্ছে। কিন্তু নিবন্ধনের বিষয়টি আরপিওতে থাকলে তা কেবল সংসদ নির্বাচনের জন্য প্রযোজ্য হয়। স্থানীয় সরকার নির্বাচন দলীয় প্রতীকের জন্য আলাদা আইনের প্রয়োজন পড়বে। আরপিও থেকে নিবন্ধনের চ্যাপ্টারটি বের করে একটি স্বতন্ত্র আইন করা হলে ক্ষেত্রে কোন সমস্যা হবে না।’
নতুন আইনের বিষয়ে মতামতের কথা তুলে ধরে সচিব বলেন, ‘আমরা ১৭টি নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল হিসেবে রাজনৈতিক দল ও বিভিন্ন সংগঠনসহ ৪১ প্রতিনিধির মতামত নিয়েছি। এটি পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে কমিশন সভায় তুলে ধরা হয়েছে। যেটি গ্রাহ্য সেটা কমিশন গ্রহণ করেছে। যেটি অগ্রাহ্য সেটি কমিশন গ্রহণ করেনি।’