সংশোধনী আসছে জাতীয় শিক্ষানীতিতে

Share on Facebook

সঠিক সময় ও তার সাথে যথাপোযুক্ত পড়াশুনার বিষয়টি মাথায় রেখে শিক্ষানীতি সংশোধনের এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি।

পরিকল্পনা কমিশন আয়োজিত অষ্টম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার অংশ হিসেবে বুধবার এক ভার্চুয়াল আলোচনা সভায় মন্ত্রী এ তথ্য জানান বলে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়।

মন্ত্রীকে উদ্ধৃত করে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, প্রায় ১০ বছর আগে শিক্ষানীতি প্রণয়ন করা হয়েছে। ১০ বছর একটি দীর্ঘ সময়, এই দীর্ঘ সময়ে অনেক পরিবর্তন হয়েছে।

“তাই এখন সময় এসেছে শিক্ষানীতিকে সংশোধন, পরিমার্জন ও সংযোজন করার। তাই সরকার শিক্ষানীতি সংশোধন করার উদ্যোগ গ্রহণ করেছে।”

বর্তমান জাতীয় শিক্ষানীতি জাতীয় সংসদে পাস হয় ২০১০ সালের ৭ ডিসেম্বর। ২০১১ সালের ২৮ জুন ওই সময়কার শিক্ষামন্ত্রীকে আহ্বায়ক করে ‘জাতীয় শিক্ষানীতি ২০১০ বাস্তবায়ন ও মনিটরিং কেন্দ্রীয় কমিটি’ গঠন করা হয়। এই কমিটির অধীনে বেশ কয়েটি উপ-কমিটিও করা হলেও এখন সেসব কমিটির আর অস্তিত্ব নেই।

২০১৮ সালের মধ্যে জাতীয় শিক্ষানীতি বাস্তবায়নের সময়সীমা ধরা হলেও শিক্ষানীতির বেশিরভাগ সুপারিশেরই বাস্তবায়ন হয়নি।

এ শিক্ষানীতিতে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত প্রাথমিক স্তর এবং দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত মাধ্যমিক স্তর হিসেবে বাস্তবায়নের সুপারিশ রয়েছে।

মাধ্যমিক স্তরের তিন ধারা অর্থাৎ সাধারণ, মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষা ধারায় কয়েকটি মৌলিক বিষয়ে অভিন্ন পাঠ্যসূচি বাধ্যতামূলক হিসেবে রাখা এবং মাধ্যমিক স্তরের বিজ্ঞানের শিক্ষার্থীদের জন্য উচ্চতর গণিত বাধ্যতামূলক করতে বলা হয়েছে সেখানে।

উচ্চ শিক্ষা স্তরে অভিভাবকের আয়ের ভিত্তিতে বেতন নির্ধারণ এবং জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের বিকেন্দ্রীকরণের কথাও ছিল অধ্যাপক কবীর চৌধুরীর নেতৃত্বে ১৮ সদস্যের শিক্ষানীতি প্রণয়ন কমিটির সুপারিশে।

তবে শিক্ষানীতি প্রণয়নের এক দশকেও শিক্ষা আইন করতে পারেনি সরকার। কোন পদ্ধতিতে প্রাথমিক স্তরকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত এবং মাধ্যমিক স্তরকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত উন্নীত করা হবে সেই সিদ্ধান্ত এখনও হয়নি। তবে ছয় শতাধিক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পরীক্ষামূলকভাবে অষ্টম শ্রেণি চালু হয়েছে।

 

প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ষষ্ঠ থেকে অষ্টম শ্রেণি যুক্ত করা হলে মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের কোন কোন শিক্ষককে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আনা হবে, বেসরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের কোন প্রক্রিয়ায় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আনা হবে, সরকারি মাধমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক হলে তাকে কোন প্রক্রিয়ায় প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আনা হবে, তিনটি নতুন শ্রেণি খোলার পরে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক কে হবেন- এসব বিষয়ের সমাধানে সরকারের কোনো উদ্যোগ দেখা যায়নি।

অন্যদিকে মাধ্যমিক স্তর দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত উন্নীত করা হলে মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সঙ্গে একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণি যুক্ত করা হবে নাকি কলেজের সঙ্গে নবম-দশম শ্রেণি যুক্ত করা হবে সে বিষয়েও কোনো সিদ্ধান্তে আসতে পারেনি সরকার।

এছাড়া সরকারি-বেসরকারি বিদ্যালয় ও কলেজ এবং ওইসব প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের কীভাবে একীভূত করা হবে, মাধ্যমিকের শিক্ষকদের কীভাবে কলেজে পাঠানো হবে বা কলেজের শিক্ষকদের কোন প্রক্রিয়ায় মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে পাঠানো হবে তা নিয়েও জটিলতা রয়েছে; যা নিরসনের কোনো পথই এখনও সরকারের তরফ খোঁজা হয়নি।

এসব বিষয় পুরোপুরি বাস্তবায়ন করা না গেলেও শিক্ষানীতি অনুযায়ী পঞ্চম ও অষ্টম শ্রেণি শেষে দুটি সমাপনী পরীক্ষা এখন নেওয়া হচ্ছে। তবে প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষা রাখার যৌক্তিকতা নিয়ে গত কয়েক বছর ধরেই আলোচনা হচ্ছে।

দীপু মনি বলেন, ইতোমধ্যে দেশের ‘বিপুল জনসংখ্যাকে’ শিক্ষার আওতায় আনা সম্ভব হয়েছে। এখন প্রয়োজন শিক্ষার গুণগত মান অর্জন। শিক্ষার সকল পর্যায়ে মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করতে সরকার বদ্ধপরিকর। একটি সমন্বিত শিক্ষা আইন প্রণয়ন প্রায় চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে।

“শিক্ষার গুণগত মানোন্নয়নে সরকার সায়েন্স, টেকনোলজি, ইঞ্জিনিয়ারিং আর্টস অ্যান্ড ম্যাথস এর দিকে গুরুত্ব দিচ্ছে। আমরা চাই আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থার মাধ্যমে দক্ষ শ্রমশক্তি তৈরি করার পাশাপাশি প্রকৃত মানুষ তৈরি করতে।

“এজন্য সরকার সততা, নৈতিকতা, দেশপ্রেম, কমিউনিকেশন স্কিল, টিম বিল্ডিং, ক্রিটিক্যাল থিংকিং, প্রবলেম সলভিংসহ বিভিন্ন সফট স্কিলের ওপর গুরুত্ব আরোপ করেছে।”

অনলাইন শিক্ষার গুরুত্ব নিয়ে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের এই যুগে কর্মক্ষেত্র এত পরিবর্তিত হবে যে বর্তমানে অর্জিত জ্ঞান ভবিষ্যতে হয়ত আর প্রয়োজন হবে না।

“সেক্ষেত্রে কর্মজীবীদের পক্ষে আবার বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাসরুমে ফিরে যাওয়া সম্ভব নয়। আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থাকে এমন পর্যায়ে নিয়ে যেতে হবে, যাতে করে কোনো কর্মজীবী যে কোনো সময় যে কোনো পরিবর্তনের সাথে নিজেকে খাপ খাইয়ে নিতে ‘রিস্কিল’ এবং ‘আপস্কিল’ করতে পারে। সে যেন অনলাইনের মাধ্যমে শিখতে পারে- আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থায় সে সুযোগ রাখতে হবে।”

পরিকল্পনা কমিশনের জ্যেষ্ঠ সচিব শামসুল আলম, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক কাজী শহীদুল্লাহ ছাড়াও কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এই সভায় যুক্ত ছিলেন।

Leave a Reply