বিদেশ ভ্রমণের প্রবণতা বাড়ছে যেসব কারণে
Tweet
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বাংলাদেশ থেকে বিদেশ ভ্রমণের প্রবণতা বাড়ছে। সন্দেহ নেই যে বাংলাদেশি পর্যটকদের ক্রয় ক্ষমতা বাড়ছে। ফলে প্রতিবছর প্রায় ২০ থেকে ২৫ লক্ষ পর্যটক পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ভ্রমণে যাচ্ছে। বিদেশ ভ্রমণের প্রবণতা বৃদ্ধির কারণ খুঁজতে পর্যটনিয়ার পক্ষ থেকে মুখোমুখি হয়েছিলাম কয়েকজন অধ্যাপক ও পর্যটকের এবং কিছু ট্র্যাভেল এজেন্ট আর ট্যুর অপারেটর সংস্থার। তাদের সাথে আলাপচারিতার নির্বাচিত অংশ তুলে ধরা হলো –
বিদেশ ভ্রমণের প্রবণতা বৃদ্ধিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের বিশাল ভূমিকা আছে বলে মনে করেন ট্যালন করপোরেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক জালাল উদ্দীন টিপু। তিনি বলেন, আজকাল অনেকেই বিভিন্ন পর্যটন গন্তব্য ঘুরতে গিয়ে ছবি তুলে ফেসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করেন। সেসব ছবি দেখে তার বন্ধু ও পরিবার পরিজনসহ বন্ধু তালিকার অনেকেই প্রভাবিত হয়, ভ্রমণে উৎসাহিত হয়। এছাড়া নতুন দেশ নতুন গন্তব্য দেখার মাধ্যমে ভ্রমণ ক্ষুধা মেটানোর মানসিক সুখলাভের বিষয়টিও গুরুত্বপূর্ণ। এরকম বেশকিছু বিষয় প্রভাবক হিসেবে কাজ করায় বাংলাদেশিদের বিদেশ ভ্রমণের (আউট বাউন্ড) প্রবণতা বাড়ছে।
ট্যুরিজম উন্ডো’র সিইও মনিরুজ্জামান মাসুম জানালেন পূর্বের যেকোনো সময়ের তুলনায় বর্তমানে বিমানের টিকেটের দাম কম ও ভিসা প্রাপ্তিও সহজ। সাশ্রয়ী টিকেট আর ভিসার সহজলভ্যতা দেশীয় পর্যটকদের বিদেশ ভ্রমণে উৎসাহী করে তুলছে। বিগত বছরগুলোতে বাংলাদেশ থেকে আশপাশের দেশগুলোতে যেমনঃ ইন্ডিয়া, নেপাল, ভুটানের পাশাপাশি থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, ইন্দোনেশিয়া এমনকি ভিয়েতনাম বা কম্বোডিয়াতেও অনেক পর্যটকই ভ্রমণ করেছে ইতোমধ্যে। এঁদের মধ্যে অনেকেই এখন ইউরোপ অ্যামেরিকা ভ্রমণের পরিকল্পনা করছে। সুতরাং আউট বাউন্ড ট্যুর দিনে দিনে বাড়ছে। মাথাপিছু আয় যেমন বাড়ছে ভ্রমণের নেশাও তেমন বাড়ছে।
রাফিউদ্দীন আহমেদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক। তিনি বললেন, বাংলাদেশের জনগণের মাথাপিছু আয় বাড়ছে। মৌলিক প্রয়োজনগুলো মেটানোর পরও মানুষের হাতে ভ্রমণের ব্যয় মেটানোর মত কিছু পরিমানে অর্থ থাকছে। এজন্য দেশের নিম্ন মধ্যবিত্ত শ্রেণীর মানুষও বছরে একবার না একবার কোথাও ভ্রমণে যাচ্ছে । সামর্থ্যের তারতম্যানুযায়ী কেউ দেশের ভিতরে ঘুরছে আবার কেউ দেশের বাইরে ঘুরছে।
অনেকেই আছেন যারা দেশের প্রায় সবগুলো পর্যটন গন্তব্য দেখে ফেলেছেন। তারাও নতুন কোনো দেশে ভ্রমণে যাচ্ছেন। আবার সারা বছরের একটানা পরিশ্রমজনিত ক্লান্তি দূর করতে ভ্রমণই সবচেয়ে আকর্ষণীয়, ফলে বছরের নির্দিষ্ট একটা সময় সাধ ও সাধ্যের সম্মিলন ঘটিয়ে পেশাজীবীরা বিদেশে পর্যটনে যাচ্ছেন বলে জানালেন এশিয়া প্যাসিফিক বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান নাজিয়া ওয়াহাব। নতুন দেশ, নতুন পরিবেশ, নতুন সংস্কৃতির সাথে পরিচিত হওয়ার জন্য নতুন নতুন পর্যটনগন্তব্যে যাওয়ার জন্যই তারা বেশী আগ্রহী থাকেন।
শুধু ভ্রমণের জন্যেই ভ্রমণ নয়, ভ্রমণের অনেক উদ্দেশ্য থাকে বলে মতামত দিয়েছেন ক’জন পর্যটক। তাঁদের মধ্যে অনেকেই উদাহরণ হিসেবে বলেছেন চিকিৎসা সেবার কথা। বছরে দু’একবার তারা হয়তো চিকিৎসা সেবা নিতে ইন্ডিয়া, থাইল্যান্ড বা সিঙ্গাপুর যান। ডাক্তার দেখানো বা নিয়মিত চেক-আপ করার সময়ের সাথে মিল রেখেই তাঁরা ভ্রমণের পরিকল্পনাও করে নেন। চিকিৎসা সেবা নেয়ার পাশাপাশি তাঁরা সেসব দেশের বিভিন্ন দর্শনীয় স্থানগুলোও ঘুরে দেখেন।
বর্তমান সময়ে বাংলাদেশে বিদেশী পর্যটক আসার তুলনায় বাংলাদেশ থেকে বিদেশে ভ্রমণে যাওয়ার হার বেশী। বাংলাদেশের পর্যটন শিল্পকে যথাযথ গুরুত্ব দিলে এবং বিশ্ব জুড়ে প্রমোট করলে বিদেশী পর্যটক আসার সংখ্যাও বৃদ্ধি পাবে বলে তাঁরা আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন। সেদিন কি খুব দূরে যেদিন দেখবো বাংলাদেশ থেকে বিদেশ ভ্রমণে (আউট বাউন্ড)যায় ৩০ লক্ষ পর্যটক আর বিদেশ হতে বাংলাদেশ (ইন বাউন্ড) ভ্রমণে আসেন অন্তত ৫০ লক্ষ পর্যটক।