গ্রামীন উন্নয়নে পর্যটন
Tweet
বিশ্ব পর্যটন দিবস মানেই পর্যটন শিল্পের সাথে জড়িত মানুষদের কাছে এক মহা উৎসবের নাম। বিশ্ব পর্যটন দিবস ২৭ সেপ্টেম্বর তারিখে সারা বিশ্বব্যাপী পালিত হয়ে থাকে। জাতিসংঘের অধীনস্থ বিশ্ব পর্যটন সংস্থার প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে ১৯৮০ সাল থেকে সকল সদস্য দেশে এটি পালিত হয়ে আসছে। দিবসটির প্রধান উদ্দেশ্য হচ্ছে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ও পর্যটন কেন্দ্রের সাথে সেতুবন্ধন গড়ে তোলা। এছাড়াও, পর্যটনের ভূমিকা সম্পর্কে জনসচেতনতা বৃদ্ধিসহ সামাজিক, সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক উপযোগিতাকে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে দেয়া এ দিবসের অন্যতম লক্ষ্য (উৎস- উইকিপিডিয়া)।
প্রতিবছর পর্যটন দিবস উৎযাপনের জন্য একটি থিম বা প্রতিপাদ্য বিষয় নির্ধারিত হয়। সেই থিমকে কেন্দ্র করে বিশ্বব্যাপী দিনটিকে বিভিন্ন অনুষ্ঠান, সেমিনার, সিম্পোজিয়ামের মাধ্যমে উৎযাপন করা হয়। ২০২০ সালে বিশ্ব পর্যটন দিবসের প্রতিপাদ্য বিষয় “Tourism and Rural Development” বা “গ্রামীণ উন্নয়নে পর্যটন” আয়োজক দেশ হিসেবে নির্বাচত হয়েছে আর্জেন্টিনা, ব্রাজিল, প্যারাগুয়ে, চিলি ও অন্যান্য সহযোগী সদস্য। প্রথম বারের মত এইবার একসাথে অনেকগুলো দেশ যৌথভাবে আয়োজক হিসেবে দিবসটি পালন করবে। Zurab Pololikashvili, UNWTO Secretary General বলেন “Tourism helps rural communities hold onto their unique natural and cultural heritage, supporting conservation projects, including those safeguarding endangered species, lost traditions or flavors.”
বাংলাদেশের পর্যটন শিল্প সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি, প্রচার ও প্রসারের জন্য বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ড, বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশন,ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্যুরিজম বিভাগ, আটাব, টোয়াবসহ বিভিন্ন পর্যটন সংগঠন বিভিন্ন র্যালি, অনুষ্ঠান, সেমিনার, সিম্পোজিয়ামের মাধ্যমে বিশ্ব পর্যটন দিবস উৎযাপন করে থাকে। এই দিনে উৎসবমূখর ভাব থাকে পর্যটনপ্রেমীদের মাঝে। এই বছর গ্রামীন উন্নয়নে পর্যটনের উপর ব্যাপক জোড় দেয়া হয়েছে। গ্রামীণ উন্নয়নের জন্য পর্যটনের মাধ্যমে গ্রামীণ সম্প্রদায়ের সামাজিক, সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি ,ঐতিহ্য প্রতিপালন ও সংরক্ষণ বিষয়গুলো গুরুত্ব পাবে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ১৯৫০ সালে আন্তর্জাতিক পর্যটকের সংখ্যা ছিল ২৫ মিলিয়ন বর্তমানে এর সংখ্যা ১২০ কোটি এবং ২০৩০ সাল নাগাদ ১৮০ কোটি ছাড়িয়ে যাবে।বিশ্ব-অর্থনীতিতে পর্যটন চোখে পরার মত অবদান রাখছে।আগামী দিন গুলোতে এই ধারা অব্যাহত থাকবে। বিশ্ব-অর্থনীতিতে ট্রাভেল এ্যান্ড ট্যুরিজমের অবস্থান চতুর্থ স্থানে(WTTC)।
কোভিড ১৯ এর প্রভাবে পর্যটন শিল্প যে ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে যেখান থেকে বেরিয়ে আসার জন্য পর্যটন ও গ্রামীণ উন্নয়ন বিশেষ ভূমিকা রাখবে বলে মনে করছে বিশ্ব পর্যটন সংস্থা।প্রাকৃতিক , সাংস্কৃতিক,ঐতিহ্যগত সৌন্দর্যে বৈচিত্র্যময় গ্রামীণ সমাজের উন্নয়ন ও বিকাশের মাধ্যমে কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি অর্জনের বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে জোর দিচ্ছেন খাত সংশ্লিষ্টরা। বাংলাদেশের গ্রামীণ পর্যটন উন্নয়ন ও বিকাশের বিশাল সম্ভাবনা আছে। বাংলাদেশ পর্যটন কর্পোরেশন ১৯৯০ সালে “ওয়ান ভিলেজ ওয়ান ডেস্টিনেশন” নামে প্রচারাভিযান করেছিলেন।সেই প্রচারাভিযানের আলকে আমরা বলতে পারি “একটি গ্রাম একটি পর্যটন আকর্ষণ কেন্দ্র” হিসেবে আমরা বিদেশি পর্যটকদের কাছে আমাদের গ্রামগুলকে উপস্থাপন করতে পারি ।কারণ আমাদের গ্রামগুলকে দেশি ও বিদেশি পর্যটকদের কাছে হতে পারে পর্যটন আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু।
বাংলাদেশের ৮৬ হাজার গ্রাম-বাংলা ৮৬ হাজার পর্যটন আকর্ষণ কেন্দ্র কারণ একটি গ্রাম থেকে আরেকটি গ্রাম আলাদা। কোন কোন গ্রাম নদী কেন্দ্রীক,পাহাড় কেন্দ্রীক,হাওর কেন্দ্রীক,বিল কেন্দ্রীক। একটি গ্রাম থেকে আরেকটি গ্রামের মানুষের আচার-ব্যবহার,সংস্কৃতি,শিক্ষাদীক্ষা, প্রথা, নীতি, জীবনযাত্রা,বিবাহ-অনুষ্ঠান আলাদা। কৃষকের ধানের চারা রোপণের দৃশ্য আমাদের চোখ জুড়িয়ে দেয় এই দৃশ্য পৃথিবীর অন্য কোথও দেখা পাওয়া বিরল। মাঠের পর মাঠ সবুজ শস্যক্ষেত্গুলো দেখে যেন মনে হয় সবুজ রাজ্য হাতছানি দিয়ে ডাকছে। গ্রামীণ মানুষের অতিথিপরায়ণতা যে কোন পর্যটককে বার বার ফিরে নিয়ে আসবে গ্রামগুলো ভ্রমণ করতে। আমরা যদি গ্রামীণ পর্যটনের দিকে গুরুত্ব দিয়ে গ্রামীন পর্যটন উন্নয়ন ও বিকশে কাজ করতে পারি তাহলে গ্রামীণ আর্থ-সামাজিক অবস্থার পরিবর্তন ও গ্রামীন বেকারদের জনগোষ্ঠীর কাজের ক্ষেত্র সৃষ্টি করা যাবে।
মোঃ সাইফুল্লার রাব্বী
প্রভাষক, ট্যুরিজম এন্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট বিভাগ, ড্যাফোডিল ইনিস্টিউট অব আইটি।
প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান – বাংলাদেশ সোসাইটি ফর ট্যুরিজম ইনোভেশন