সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়ুক ঐতিহ্যবাহী বাংলা খাবারের ঘ্রাণ
Tweet
শুধুমাত্র খাবারের উপর নির্ভর করেও একটি দেশ বিশ্বব্যাপী পরিচিতি পেতে পারে। উদাহরণ হিসেবে আমরা প্রতিবেশী দেশ ইন্ডিয়ার কথাই উল্লেখ করতে পারি। ইন্ডিয়াকে সারা বিশ্বে পরিচিতি এনে দিতে যতগুলো খাত বা উপখাত কাজ করেছে ইন্ডিয়ান খাবার সেগুলোর অন্যতম। পৃথিবীর বৈচিত্র্যময় ও সুস্বাদু সব খাবারদাবার ফ্রান্সের দখলে। থাই বা চাইনিজ মেন্যু পুব অতিক্রম করে পশ্চিমেও জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। কিন্তু বাংলা? আন্তর্জাতিক জনপ্রিয় খাদ্য তালিকায় বাংলা খাবারের অবস্থান কোথায়? বিশ্বজুড়ে পরিচিতি ও জনপ্রিয়তা পেতে হলে বাংলা খাবারকে নান্দনিক উপায়ে ছড়িয়ে দিতে হবে প্রতিটি মহাদেশে।
খাবারদাবার নিয়ে আমার বিশেষ পড়াশোনা বা গবেষণা নাই। তাই এই সংক্রান্ত কোনো তথ্য বা ভবিষ্যৎবাণী আমি খুব জোর দিয়ে আরোপ করতে পারবো না। তবে ভোজনরসিক মানুষ হিসেবে বাংলা খাবার নিয়ে আমি নিশ্চয়ই আমার স্বপ্নের কথা বলতে পারবো। আমি আমার ইচ্ছার কথা বলতে পারবো। আমি আমার ভালবাসার কথা বলতে পারবো। আমি আমার পরিকল্পনার কথা বলতে পারবো।
ঘনবসতিপূর্ণ ছোট্ট আয়তনের এই বাংলাদেশে প্রায় বিশ কোটি লোকের বসবাস। অর্থাৎ সারা পৃথিবীর মোট জনসংখ্যার প্রায় ০৩% বাংলাদেশে বাস করে অথচ আয়তনের দিক থেকে বাংলাদেশ পৃথিবীতে অন্যতম একটি ক্ষুদ্র দেশ। আরও সহজ করে বললে বাংলাদেশের নিজস্ব ভোক্তা সংখ্যার ঘনত্ব পৃথিবীর যেকোনো দেশের ভোক্তা সংখ্যার ঘনত্বের তুলনায় অনেক বেশি। বাংলাদেশের ভোক্তা সংখ্যা ঘনত্ব প্রতি বর্গ কিলোমিটারে প্রায় ১২০০ জন যা আমেরিকায় ৩৬ জন এবং কানাডায় মাত্র ০৪ জন।
তবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য হচ্ছে, আগামী ২০৩০ সাল নাগাদ বিশ্বের মোট ভোক্তা সংখ্যা গিয়ে দাঁড়াবে ৮৪০ কোটিতে। বাংলাদেশের নিজস্ব ভোক্তা সংখ্যা তো ইতোমধ্যেই অনেক বড়। বিশ্বব্যাপী তরুণ জনসংখ্যা সবসময়ই বেশি। ২০৩০ সালে পৃথিবীর মোট জনসংখ্যার মধ্যে তরুণ জনসংখ্যাই হবে ১৩০ কোটি। সেই সময়ে জন্মহার ও মৃত্যুহার কমে যাওয়ার ফলে কর্মক্ষম এবং নির্ভরশীল জনসংখ্যা যুগপৎভাবে বেড়ে যাবে। এই পরিসংখ্যান বলে দিচ্ছে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক বাজারে বাংলা খাবার ছড়িয়ে দিতে কতো সুযোগ অপেক্ষা করছে আমাদের সামনে নিকট ভবিষ্যতে।
কর্মক্ষম শ্রেণিভুক্ত জনসংখ্যা ও নির্ভরশীল শ্রেণিভুক্ত জনসংখ্যা উভয়ই মুলত ভোক্তা। দেশের উৎপাদনশীলতায় কোন শ্রেণির জনসংখ্যা কতোটুকু অবদান রাখবে আমরা সেই আলোচনায় না গিয়েও বলে দিতে পারি সেই সময়ে পৃথিবীর মোট ভোক্তা সংখ্যা বেড়ে যাবে অতীতের যেকোনো সময়ের তুলনায় অনেক বেশি। অর্থ্যাৎ খাদ্য উৎপাদন ও বাজারজাতকরণের কী উজ্জ্বল সম্ভাবনা নিকট ভবিষ্যতেই!
সরকারি ও বেসরকারি যৌথ উদ্যোগের মাধ্যমে বাংলা খাবারকে বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয় করে তোলা যেতে পারে। ঘনবসতিপূর্ণ বাংলাদেশের প্রত্যেকটি জনপদের রয়েছে আলাদা আলাদা সংস্কৃতি ও রসনা বিলাস। এসব বৈচিত্র্যময় ও ঐতিহ্যবাহী খাবার দেশের মধ্যে জনপ্রিয় করে তুলতে পারলে একদিকে যেমন দেশিয় খাবারের বাজার রক্ষা করা সম্ভব হবে অন্যদিকে ভিনদেশী খাবারের আগ্রাসন হতে মুক্তি পাওয়া সম্ভব। উজ্জ্বল সম্ভাবনাময় ত্রিশের এক দশক আগে ঠিক এই সময়ে পৃথিবীর প্রায় প্রত্যেকটা দেশেই বাংলাদেশের নাগরিক অবস্থান করছে। কেউ পড়াশোনা, কেউ চাকরি, আবার হয়তো কেউ ব্যবসাবাণিজ্য বা কোনো না কোনো উদ্দেশ্যে বসবাস করছে বিশ্বব্যাপী। এসব প্রবাসীদের সাথে সমন্বয় করে প্রত্যেকটা দেশেই বাংলা খাবারের বিপনন কার্যক্রম শুরু করতে পারলে প্রবাসীদের পাশাপাশি সেসব দেশগুলোর স্থানীয় ভোক্তাদের কাছেও পৌঁছে যাবে বাংলা খাবারের স্বাদ।
এই আশাজাগানিয়া ভবিষ্যতের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে বাংলাদেশেও আজ পালিত হলো ইন্টারন্যাশনাল শেফস ডে। ২০০৪ সাল থেকে এই দিনটি পালন করা শুরু করেছে প্যারিস ভিত্তিক সংগঠন ওয়ার্ল্ড এসোসিয়েশন অব শেফস সোসাইটিজ। ধীরে ধীরে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়া শেফস ডে’র এবারের প্রতিপাদ্য বিষয় ভবিষ্যতের জন্য স্বাস্থ্যসম্মত খাবার। এই শুভক্ষণে আমি বাংলাদেশের সমস্ত রন্ধন শিল্পীদের কাছে আমার প্রত্যাশার কথা বলতে চাই। সম্ভাবনার কথা বলতে চাই। স্বপ্নের কথা বলতে চাই। আপনাদের হাত ধরেই দেশের সীমানা অতিক্রম করে সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়ুক ঐতিহ্যবাহী বাংলা খাবারের ঘ্রাণ। সারা বিশ্বের সকল ভোক্তাদের ঘ্রাণ ইন্দ্রিয় পরিচিত হয়ে উঠুক সুস্বাদু বাংলা খাবারের সাথে। আন্তর্জাতিক শেফ ডে’তে দেশের সকল শেফদের প্রতি জানাই শ্রদ্ধা ও ভালবাসা।
আবু রায়হান সরকার
সম্পাদক, পর্যটনিয়া।